• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন : তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অপেক্ষা, উত্তেজনা

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ৪, ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন : তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অপেক্ষা, উত্তেজনা

যুগভেরী ডেস্ক ::
ট্রাম্প নাকি বাইডেন? এখনো সমাধান আসেনি। কিন্তু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেস জানেসা।
এক টুইটে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “এটা খুব স্পষ্ট যে আমেরিকার জনগণ ডনাল্ড ট্রাম্প ও মাইক পেন্সকেই আরও চার বছরের জন্য নির্বাচিত করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের মাতৃভূমি স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীই প্রথম ইউরোপীয় নেতা, যিনি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হবেন তার উত্তর এখনও জানা নেই। হয়ত কয়েকদিনেও হয়ত উত্তর জানা যাবে না: এটাই এখন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বেশি। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই এখন চলে যাচ্ছে পোস্টাল ভোটের দিকে, যেসব ভোট এখনও মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়ার মত জায়গাগুলোতে গণনা করা বাকি।
ধোঁয়াশাচ্ছন্ন নির্বাচনী ফল যদি সুপ্রিম কোর্টে গড়ায় সেজন্য আইনজীবীরা প্রস্তুতই আছেন। আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আইনি চ্যালেঞ্জে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার হুমকি আগেই দিয়েছেন। তেমন হলে ফল নির্ধারিত হতে লেগে যাবে আরও কয়েক সপ্তাহ।
নির্বাচনের এ পর্যায়ে অনিশ্চয়তা অবশ্যম্ভাবী। আর এ অনিশ্চয়তা থেকে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাতে ভোট গণনার উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিভিন্ন শহরে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাতে ভোট গণনার উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিভিন্ন শহরে।
বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে মিছিলের কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়, কোথাও কোথাও আতশবাজিও পোড়ানো হয়।
মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে- “আমরা যদি বিচার না পাই, তারাও শান্তিতে থাকতে পারবে না!”
হোয়াইট হাউজের বাইরে হাতাহাতির মত ঘটনারও খবর পাওয়া গেছে। সেখানে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে এনবিসির খবরে জানানো হয়েছ।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদক ক্রিস্টিনা রুফিনি একটি টুইট করে জানিয়েছেন, সেখানে ‘স্মোক বম্ব’ জাতীয় কিছু ফাটানো হয়েছে বিক্ষোভের মধ্যে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সিয়াটলে বিক্ষোভ থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলস, নর্থ ক্যারোলাইনা, পোর্টল্যান্ড, ওরেগন ও নিউ ইয়র্ক থেকেও বিক্ষোভের খবর এসেছে।
‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত রাজ্যগুলোর প্রাথমিক ফলাফলে যখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের চরম উত্তেজনা, তখনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বললেন রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে দেওয়া এই ভাষণের শুরুতেই নিজের পরিবার ও কোটি সমর্থককে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন, যারা তাকে ভোট দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “বিরাট উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমরা সবকিছু জিতে নিচ্ছি।”
গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডায় জয়ের খবর সমর্থকদের দিয়ে খুশির সুরে তিনি বলেন, “আমরা শুধু জিতিনি, বড় ব্যবধানে জিতেছি।”
পেনসিলভেইনিয়াতেও রিপাবলিকানদের এগিয়ে থাকার দাবি করেছেন ট্রাম্প, যদিও এর আগে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনও একই দাবি করেছেন।
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, “আমেরিকার সাধারণ মানুষের সাথে একটা প্রতারণা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জার।”
তিনি বলেছেন, “এই নির্বাচনে আমরাই জিতব। আমি যতদূর জানি, ইতোমধ্যে আমরা জিতেই গেছি।”
এখনও বহু ভোট গণনা বাকি থাকতে ট্রাম্পের এমন ঘোষণাকে ‘ভুয়া দাবি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে লড়াই করতে তিনি প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ৪৩৭টির প্রাথমিক ফলাফলে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চরম উত্তেজনার মুহূর্ত উপস্থিত।
মিড ওয়েস্ট আর পেনসিল ভেইনিয়া, মিশিগান, আইওয়া, উইসকনসিনের প্রাথমিক ফলাফল বলছে, চূড়ান্ত জয়-পরাজয় নির্ধারণের আগে উত্তেজনার পারদ চড়তে পারে আরও।
রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে ২১টি রাজ্যে জয়ের সুবাতাস পাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড টেক্সাস আর ফ্লোরিয়ায় তার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন তার দলের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর পাশাপাশি অ্যারিজোনায় জয়ের আভাস পাচ্ছেন।
প্রাথমিক ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে থাকা ডনাল্ড ট্রাম্প ভোটের রাতে টুইট করে অভিযোগ করেছেন তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
টুইটে তিনি লিখেছেন, “আমরা আশাবাদী, কিন্তু তারা এ নির্বাচন চুরির চেষ্টায় আছে। সেটা আমরা তাদের কখনোই করতে দেব না। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর ভোট নেওয়া যায় না!”
অবশ্য টুইটার কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ওই টুইটে একটি লেবেল সেঁটে দিয়ে বলেছে, ওই বক্তব্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। টুইটার ব্যবহারকারীদের সঠিক তথ্য খুঁজে নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে সেখানে।
ভোটের রাতে ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে সমর্থকদের সামনে এসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, নির্বাচনে তিনি জয়ের পথেই আছেন বলে তার বিশ্বাস।
“আমরা জানতাম, আমাদের অপেক্ষা দীর্ঘ হবে, আমরা জানতাম, হয়ত আমাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে, কিংবা তারও বেশি।
“কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের যা অবস্থান, সেটা সন্তোষজনক। আজ রাতে আমি আপনাদের বলতে এসেছি, এই নির্বাচনে আমরা জয়ের পথেই আছি।”
সব ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন।
সময়ের ভিন্নতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একেক এলাকায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে একেক সময়ে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ইন্ডিয়ানা (১১ ইলেকটোরাল ভোট) ও কেন্টাকি (৮) অঙ্গরাজ্যের অনেক কেন্দ্রে ভোট শেষ হয়। এরপর জর্জিয়া (১৬), সাউথ ক্যারোলাইনা (৯), ভারমন্ট (৩) ও ভার্জিনিয়ায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল সাধারণত ভোটের রাতেই হয়ে থাকে। ২০১৬ সালে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে বিজয় মঞ্চে এসে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবারের নির্বাচন পরিস্থিতি অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্ন। কর্মকর্তারা এরইমধ্যে শঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, ভোটের ফল পেতে কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। এর কারণ হিসেবে পোস্টার ব্যালট অনেক বেশি হওয়ার কথা বলেছেন তারা।
এ বছর দশ কোটির বেশি আমেরিকান ভোটার ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন, যা দেশটির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ভিড় এড়াতেই মূলত ডাকযোগে ভোটের সংখ্যা বেড়েছে।
ভোটারের স্বাক্ষর ও ঠিকানার মতো বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখার মতো যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হওয়ায় পোস্টাল ভোট গণনায় সময় বেশি লাগে।

ফ্লোরিডা ও ওহিও’র মতো কয়েকটি অঙ্গরাজ্য নির্বাচনের কয়েক দিন আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু করায় সেখানে এসব ভোট গণনার পূর্ব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এসব অঙ্গরাজ্যে ভোটের রাতেই বিজয়ীর নাম পাওয়া যেতে পারে।
তবে পেনসিলভেইনিয়া ও উইসকনসিনের মতো অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আগে শুরু করা হয়নি।
পোস্টাল ভোট গণনা শেষে অনেক জায়গায় সরাসরি দেওয়া ভোটের ফল বদলে যেতে পারে। আগাম ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের পাল্লা ভারী হবে বলেই অনেকে ধারণা করছেন।
সে কারণে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ভোট গণনার আগে প্রাথমিক ফলাফলে নির্বাচনের পুরো চিত্র পাওয়া নাও যেতে পারে।
এ বছর অন্যান্য ভোটের ফল পেতেও দেরি হয়েছে। মধ্য মার্চের পর ২৩টি স্টেটে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল পেতে গড়ে চার দিন করে দেরি হয়েছিল বলে ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বশেষ ২০০০ সালে ভোট শেষ হওয়ার পর অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ফলের জন্য। এক মাস পর আদালতের হস্তক্ষেপে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরকে হারিয়ে বিজয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন