যুগভেরী ডেস্ক ::::
স্বামী জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় জিল বাইডেন ‘সম্ভাব্য ফার্স্ট লেডি’ থেকে এখন আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’; আগামী ৪ বছরের জন্য হোয়াইট হাউসই হবে তার আবাসস্থল।
জুলাইয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলনে স্বামী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পাওয়ার পর যে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে জিল পার্টি কনভেনশনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, ১৯৯০ এর দশকে সেখানেই ইংরেজি পড়াতেন তিনি।
বাইডেন প্রার্থী হওয়ার পর জিল তার স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেসময় ‘সম্ভাব্য ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে কয়েক দশকের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্ত্রীর নানান গুণের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।
“দেশজুড়ে আপনারা যারা আছেন, আপনারা আপনাদের প্রিয় শিক্ষকের কথা ভাবুন, যিনি আপনাকে নিজের উপর আস্থা রাখার আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন। জিল বাইডেন তেমন ফার্স্ট লেডিই হতে যাচ্ছেন,” বলেছিলেন তিনি।
ওই বক্তৃতাপর্বের পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। স্বামী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সামনে নতুন দায়িত্ব আসছে জিলের জীবনেও।
৪৩ বছর আগে ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্কে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন জো আর জিল। ৪ বছর পর তাদের মেয়ে অ্যাশলে বাইডেনের জন্ম।
জোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আগে ১৯৭০ সালে জিলের বিয়ে হয়েছিল সাবেক কলেজ ফুটবলার বিল স্টিভেনসনের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
১৯৭২ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় জো বাইডেন তার প্রথম স্ত্রী ও এক বছর বয়সী মেয়েকে হারান। তবে ওই দুর্ঘটনায় তাদের দুই ছেলে বেঁচে গিয়েছিল।
ওই ঘটনার তিন বছর পর জিলের সঙ্গে জো-র পরিচয় হয়। জো-র ভাইয়ের মাধ্যমে এ পরিচয় হয়েছিল বলে জিল জানিয়েছেন।
সেসময় জিল পড়তেন কলেজে, আর জো ততদিনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর।
“আমি জিন্স, টি-শার্ট পরা অনেকের সঙ্গে ডেটিং করেছি; কিন্তু তিনি যখন দরজা দিয়ে এলেন তার পরনে ছিল স্পোর্ট কোট ও লোফারস। আমি ভেবেছি,‘এটা কখনোই হবে না, কয়েক লাখ বছরেও না’। তিনি আমার চেয়ে ৯ বছরের বড়।
“আমরা মুভি থিয়েটারে গিয়ে ‘এ ম্যান অ্যান্ড এ উইমেন’ চলচ্চিত্রটি দেখি আর এরপরই আমরা সত্যিকার অর্থে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাই,” ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগকে নিজেদের প্রথম ডেটিংয়ের কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন জিল।
তবে সহজে জিলের মন জয় করতে পারেননি জো। ‘হ্যাঁ’ শুনতে তাকে পাঁচবার প্রস্তাব দিতে হয়েছিল।
“আমি চাইনি জো-র সন্তানরা আরেকটা মা হারাক। সে কারণে আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে নিতে চেয়েছিলাম,” ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন জিল।
জিল জ্যাকবসের জন্ম ১৯৫১ সালের জুনে, নিউ জার্সিতে। পাঁচ বোনের সবার বড় জিল বেড়ে ওঠেন ফিলাডেলফিয়ার শহরতলির উইলো গ্রোভে।
ব্যাচেলর ডিগ্রির পাশাপাশি তার দুটো মাস্টার্স ডিগ্রিও রয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি ডেলওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব এডুকেশনও ডিগ্রি পান।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার আগে তিনি অনেকগুলো বছর কাটান কমিউনিটি কলেজ, সরকারি হাই স্কুল ও কিশোর-কিশোরীদের মনোরোগ হাসপাতালে শিক্ষকতা করে।
জো যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকাকালেও জিল ছিলেন নর্দার্ন ভার্জিনিয়া কমিউনিটি কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক।
এখন ৬৯ বছর বয়সী জিলের শিক্ষকতার ক্যারিয়ার কয়েক দশকের।
চলতি বছর ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলনে তিনি যে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, ডেলওয়্যারের সেই ব্র্যান্ডিওয়াইন হাই স্কুলে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইংরেজি পড়িয়েছিলেন।
২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামীর সূত্রে জিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকেন্ড লেডি’ ছিলেন । ওই ৮ বছর তিনি কমিউনিটি কলেজের প্রসার, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সহায়তায় নানান কর্মকাণ্ড এবং স্তন ক্যান্সার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে যুক্ত ছিলেন।
সামরিক বাহিনীর ভেটেরান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন সহযোগিতা দিতে তৎকালীন ‘ফার্স্ট লেডি’ মিশেল ওবামার সঙ্গে চালু করেছিলেন ‘জয়েনিং ফোর্সেস ইনিসিয়েটিভ’।
সামরিক বাহিনীর পরিবারের সদস্য নাতনির অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা জিলের বেই ‘ডোন্ট ফরগেট, গড ব্লেস আওয়ার ট্রুপস’ ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
চলতি বছর স্বামীর বিভিন্ন প্রচার সমাবেশে তাকে একনিষ্ঠ সমর্থকরূপেই দেখা গেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও চাঁদা তোলার কর্মসূচিতেও তিনি স্বামীকে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা