যুগভেরী ডেস্ক :::
যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না সাবেক কূটনীতিকরা।
তবে বাংলাদেশি অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা ‘হলেও হতে পারে’ বলে মনে করছেন তাদের কেউ কেউ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখি না। আর আমাদের সঙ্গে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোতে মার্কিন প্রশাসনে যেই ক্ষমতায় আসুক, খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাই।
”আমাদের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে, সেটা হলে সেখানে বাংলাদেশের অনিয়মিত যারা আছেন, তারা কিছুটা লাভবান হবেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।
আর এর মধ্য দিয়ে বহু আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া রিপাবলিকান দলের নেতা ডনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনের নিয়ম বদলাতে তৎপর হন ট্রাম্প। সে সময় সাতটি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মেট ১৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কড়াকড়ি চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের মধ্যে বিদেশে জন্মগ্রহণকারীর যে সংখ্যা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শেষ বছর ২০১৬ সালে ছিল, ২০১৯ সালে এসে তা ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে পরিবর্তন এসেছে তাদের পরিচয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার হারও এই সময়ে কমে এসেছে, বিশেষ করে যাদের পরিবারের কেউ যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বেড়েছে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ৮৫ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল, পরের বছর তা ৫৪ হাজারে নেমে আসে। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি হবে না, যা ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী প্রকল্প শুরু করার পর সর্বনিম্ন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেই ক্ষমতায় থাক, তাতে বাংলাদেশের জন্য কোনো ‘অসুবিধা নেই’।
“হোয়াইট হাউজে যিনিই আসেন, আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ ব্যক্তি বিশেষের উপর (আমেরিকার) পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে না।”
বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “ভালো-মন্দ সবকিছুতে আছে। বাইডেন সাহেব জলবায়ু নিয়ে সোচ্চার, অভিবাসী সম্পর্কেও সোচ্চার। সুতরাং প্লাস-মাইনাস আছে।”
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘লক্ষ্যণীয় কোনো’ পরিবর্তনের সম্ভাবনা তিনি দেখেন না।
“যে রকম আছে, আমার মনে হয় এই রকমই থাকবে। তবে, ২০-২৫ বছর আগের তুলনায় আজকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। কারণ আমাদের অর্থনীতির আকার ও কর্মকাণ্ড বেড়েছে।”
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কোনো অবস্থানে এখনও পৌঁছাতে পারেনি।
“আমরা পেরিফেরাল একটা অবস্থানে আছি। সেখানে বাইডেন আসার পরে লক্ষ্যণীয় কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না।”
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ‘কয়েকটি ইস্যুর ওপর’ নির্ভর করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এর মধ্যে আছে মানবাধিকার, মানব পাচার ও গণতন্ত্র। এই ইস্যুগুলো দিয়েই তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কটাকে দেখে। এগুলোর উপর তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপর নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
”বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র কী অবস্থায় আছেৃ এটা তাদের সিস্টেমের মধ্যেই আছে। এগুলো চালু থাকবে, যেই ক্ষমতায় আসুক। এগুলোর তথ্য সংগ্রহের নিজস্ব মেকানিজম তাদের আছে। প্রায়ই দেখা যাবে, কিছু বিষয় ক্রিটিক্যাল হবে, সরকার প্রতিবাদ করবে- এতে তাদের কিছু আসবে যাবে না।”
একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কেও বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না তৌহিদ হোসেন।
“আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যদি ঠিক থাকে, তারা ঠিকমত উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারব।”
রোহিঙ্গা সঙ্কটে অর্থ সহায়তা দিয়ে এলেও ট্রাম্পের সময়ে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বা মিয়ানমারের বিষয়ে জোরালো কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রকে।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ বলেন, “আমাদের তুলনায় শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে মিয়ানমারের নেগোশিয়েটিং পজিশন অনেক শক্তিশালী। কারণ চীন প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল মিয়ানমারের উপরে। চীনের বঙ্গোপসাগরে আসতে হয় মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে। কাজেই তাদের বার্গেইনিং পজিশন অনেক ভালো, আমাদের তুলনায়।
”যেহেতু চীন নির্ভরশীল মিয়ানমারের উপরে, কাজেই পশ্চিমের সঙ্গে নেগোসিয়েশনেও একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেটার পজিশন পাবে মিয়ানমার। আর তাদের সম্পদ আছে, সেগুলো লুটপাট করার জন্য অনেকেই আসছে।”
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এশিয়া অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন কী নীতি নেবে, তার ওপরে কিছু বিষয় নির্ভর করবে।
“এশিয়াতে চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো, সেগুলোর আলোকে যদি আমরা কোনোভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেতে পারি, সেটা পাওয়া সম্ভব।”
ট্রাম্পের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আলোচনা এবং বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছিল।
বাইডেন এলে সেসব ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটবে কি না- এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, “আমার মনে হয় না ব্যাঘাত ঘটবে। কারণ এসব নিয়ে তাদের বিশেষ স্বার্থ জড়িত নাই।
”বঙ্গবন্ধুর খুনির ফেরানোর বিষয় অনেকটা নিউট্রাল ইস্যু। আইনের মাধ্যমে ঠিক হবে। সুতরাং এগুলোতে আমাদের কোনো ব্যাঘাত হবে না। ঝামেলা হবে না।”