যুগভেরী ডেস্ক :::
প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির এবং নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক দলটি।
রোববার সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের এই সম্মেলন শুরু হয়। দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় বলে সংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান।
হেফাজতের গত কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক এবারও একই দায়িত্ব পেয়েছেন। জুনাইদ বাবুনগরী ছিলেন শফীর কমিটির মহাসচিব, আর কাসেমী ছিলেন নায়েবে আমির।
সারাদেশে সংগঠনের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনে। তবে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শুরা কমিটির সিদ্ধান্তে।
প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নায়েবে আমির নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শুরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা।
যেখানে এই সম্মেলন হয়েছে, হাটহাজারীর সেই আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মুহতামিম বা পরিচালক ছিলেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার আগের দিন তিনি অভ্যন্তরী কোন্দলে মাদ্রসার কর্তৃত্ব হারান।
আহমদ শফীর অনুসারীদের অভিযোগ, হেফাজতের সম্মেলনে তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের এই সম্মেলনের ‘বৈধতা নেই’।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে ‘শফী হুজুরের হাতে গড়া অরাজনৈতিক কওমী সংগঠন’ হেফাজতে ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে ‘জামায়াত-শিবির, বিএনপির হাতে’ তুলে দেওয়া হচ্ছে বলেও গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন।
জুনাইদ বাবুনগরী ও নূর হোসাইন কাসেমী, ফাইল ছবিজুনাইদ বাবুনগরী ও নূর হোসাইন কাসেমী, ফাইল ছবিযুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় নেমে আলোচনায় উঠে আসে হেফাজতে ইসলাম। তার আগেই গঠিত এই সংগঠনের আমিরের পদে ছিলেন আহমদ শফী।
শফীর বয়স হওয়ায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় তার উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে তার অনুসারী এবং বাবুনগরীর অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয় চলতি বছর।
মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে থাকা জুনাইদ বাবুনগরী ছিলেন মাদ্রাসাটির শীর্ষ পদের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু শফীর ছেলে আনাস মাদানির সঙ্গে তার দ্বন্দ্বে মাদ্রাসায় অস্থিরতা দেখা দেয়।
এর জেরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী। শফী সমর্থকরা সেই দফা টিকে গেলেও তার রেশ থেকে যায়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর মাদ্রাসা খোলা হলে সেপ্টেম্বরে আকস্মিকভাবে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের মুখে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার শুরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। আর মুহতামিম আহমদ শফী নিজের পদ ছেড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান আহমদ শফী। তার জানাজায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে জুনাইদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে।
শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ফেরেন জুনাইদ বাবুনগরী; হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব গঠনে তার সমর্থকরা সক্রিয় হয়।
এর মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর নাজিরহাট মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ফটিকছড়ির আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী হেফাজত আমির হিসেবে জুনাইদ বাবুনগরীকে দেখতে চাওয়ার কথা জানান।
দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা সম্প্রতি ফরাসি সাময়িকীতে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন, যাতে জুনাইদ বাবুনগরী ও কাসেমি ছিলেন নেতৃত্বে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা