দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি
গাড়ী দেখলেই লাঠি হাতে হামলে পড়ছেন পিকেটাররা। অতি উৎসাহী হয়ে আঘাতের পর আঘাত করে ঝাঝরা করে দিচ্ছেন গাড়ির গ্লাস। প্রাইভেট, বিদেশগামী কিংবা রোগী বহনকারী গাড়ীও রেহাই পায়নি তাদের তাণ্ডব লিলা থেকে। ভাঙা গ্লাসের টুকরো পড়ে আহত যাত্রীদের আর্তনাদ আর আতঙ্কিত পথচারীদের শোর চিৎকার যেনো তাদের হিংস্রতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) ভোর থেকেই দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি সমর্থিত ২০ দলীয় জোট। কর্মসূচিতে ভোর ৬টা থেকেই সড়কের দখল নেয় বিএনপি, জামায়ত-শিবির, যুবদল, ছাত্রদলসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা। তারা লাঠি-সোটা হাতে নিয়ে মহ সড়কে পিকেটিং করতে থাকে। গাড়ি দেখলেই হরতাল চলছে, চলবে এমন স্লোগান দিয়ে গাড়িতে ভাংচুর করতে দেখা যায় ক্ষুব্ধ পিকেটারদের।
এদিকে, সকাল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে টার্মিনাল আসার পর জানতে পারেন বাস ছাড়ছে না মালিক সমিতি। যদিও আগের দিন সারাদেশে বাস চলবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু হরতালের দিন দূরপাল্লাতো দূরের কথা, আন্ত:জেলা বাসও পর্যন্ত ছাড়ছেন না তারা। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। কেউ কেউ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যাওয়ার জন্য টার্মিনাল এসেছেন। আবার অনেকেই এসেছেন সিলেটের বাহিরে যাওয়ার জন্য। যেমন, সিলেট থেকে ঢাকা-হবিগঞ্জ-কুমিল্লা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সরাসরি যান চলাচল হয়ে থাকে। কিন্তু হরতালের কারণে বন্ধ রয়েছে সবরকম যানবাহন।
হরতালকে ক্ষেন্দ্র করে ভোর থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা। এসময় হরতালকারীদের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের সংবাদ ক্যামেরাবন্দী করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েন তারা। এমনটি সরজমিন প্রতিবেদন প্রকাশেও তারা হরতালকারীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বার বার।
এদিকে বেলা ২টার দিকে কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা (সিলেট-থ-১১-৪৮৩৪) তেলিবাজার যাওয়ার পথে বদিকোনাস্থ প্রগতী স্কুলের সামনে পৌঁছা মাত্র পিকেটাররা পেট্রোল বোমা হাতে নিয়ে হরতাল চলছে, চলবে এমন স্লোগান দিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অপর দিকে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ভোর রাতে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-১৬-৮২৩৯) একই স্থানে পৌঁছা মাত্র পিকেটাররা গাড়ির চালক ও হেলপারকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। সাথে সাথে গাড়িতে আগুন ধরে গেলে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চালক ও হেলপার লাফাইয়া সড়কে পড়েন। এমতাবস্থায় চালকবিহীন গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হরতালকারীদের গতিরোধকৃত সিএনজি অটোরিকশাকে আঘাত করলে গাড়ি দুটি সড়ক থেকে ছিটকে পাশের নিচু জমিতে পড়ে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অটোরিকশা চালক রফিক মিয়া। এসময় গুরুতর আহত হন গাড়ির ৫ যাত্রী।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ সুরমায় হরতালের কবলে পড়ে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন এবং ওই অটোরিকশার ৫ যাত্রীসহ অন্যান্য যানবাহন মিলিয়ে অন্তত ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম পরিচয় কিছুই পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সিএনজি অটোরিকশা চালক রফিক মিয়ার ভাই বশির মিয়া বাদী হয়ে ওই দিনই দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় লালাবাজার এলাকার লক্ষীপুর গ্রামের ইমরান আহমদ ও তার পিতা মো. ফিরোজ মিয়াসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় আসামি ফিরোজ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে মর্মে নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, হরতালে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হরতালকারীদের আক্রমণে অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে ওমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভে ক্লিনিকে ভর্তি করেছে। তাছাড়া, ঘটনাস্থলেই একজন অটোরিকশা চালক মারা গেছেন। তার স্বজনদের সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে এবং এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।