আবদুল হক মামুন :::
এই বসন্তে ঘুরে আসুন বানিয়াচংয়ের সোয়াম ফরেষ্টখ্যাত লক্ষীবাউর জঙ্গল (স্থানীয় ভাষায় যাকে খড়তির জঙ্গল বলে ডাকা হয়)। হাওর বেষ্টিত প্রায় ৫ শত একর আয়তনের উপর শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে এই বন। প্রতিদিন শত শত ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ঘুরে দেখে যায় এই বনের দৃশ্য। নানান প্রজাতির গাছের সারি সারি দাড়িয়ে আছে এই বনে, তাদের মধ্যে হিজল করস সহ নাম না জানা হরেক রকমের গাছ, আছে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির পাখির মেলা। পাখিদের কলরবে মুখরিত করে রাখে চারদিক, এলাকাবসীর নিষেধাজ্ঞা আছে পাখি শিকারের। এখানে সকাল বিকাল বসে পাখিদের মিলন মেলা। শীতের অতিথি পাখিদের আশ্রয়স্থল হল এই বন, এই বনে আছে বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপের বাস।
বর্ষাকালে অন্যরকম রূপধারণ করে এই বন। বিশাল জল রাশির মাঝে দাড়িয়ে থাকে দৃষ্টিনন্দন জলারবন। বর্ষাকালে আপনাকে আরো বাড়তি আনন্দ দিবে বর্ষার বিশাল জলরাশি, চারদিকে জল আর জল নিজের চোখে না দেখলে এই বনের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। বর্ষাকালে এই বনের রূপ আপাতত বর্ণনা নাই বা করলাম, আপনাদের স্বচক্ষে দেখার অপেক্ষায় রাখলাম। আপাতত এই বসন্তে সঙ্গী সহ বা দলবেঁধে ঘুরে আসতে পারেন আশা করি আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হয়ে উঠবে। যেহেতু এখন শুকনো মৌসুম আপনার যারা ভ্রমণ পিপাসু ঘুরে আসুন না নতুন একটি জায়গায়।
আশা করি আপনার ভ্রমণ সফল হবে আপনার প্রকৃতিও দেখা হল নতুন একটি জায়গায় সাথে পরিচয় ঘটল আপনাদের। হাওরের মাঝ খান দিয়ে ঢালাই-করা রাস্তা আপনাকে নিয়ে যাবে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর এই বনে। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ দূরত্বে এই বনের অবস্থান। বনে যাওয়ার সময় আপনি বড় বাজার অথবা আর্দশবাজার থেকে শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে গেলে খুবই ভাল হবে কারন রাস্তা আপনি কোন বাজার বা দোকান পাবেন না। এই মৌসুমের আপনার অবসরে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন এই বনে। যাতায়াত খুবই ভাল আপনারা চাইলে মোটর বাইকে অথবা টমটমেও যেতে পারবেন।
বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে ২০ মিনিট সময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন বনে। চাইলে আপনারা বড় গাড়ীতেও যেতে পারবেন। আপনারা চাইলে পিকনিক ও করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে সকাল বেলায় রওয়ানা দিতে হবে, রান্নার জিনিসপত্র বানিয়াচং সদর থেকে বাজার সদাই করে সাথে নিয়ে ওখানে রান্না করে নিতে পারবেন। অথবা বানিয়াচং সদরে বেশ কয়েকটি ভাল মানের খাবারের হোটেল আছে আপনারা চাইলে আগেই অর্ডার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের কে কিছু খাবার হোটেলের ঠিকানা দিয়ে রাখলাম। বড় বাজার পোষ্ট অফিস রোডে বেশ কয়েকটা খাবারের দোকান আছে। হিমেল, পানাহার, মুজিব হোটেল সহ আরো বেশ কয়েটা খাবারের দোকান পাবেন। আমরা আপনাদের কে শুধু লক্ষীবাউর বন ভ্রমণের কথা বলব না তার সাথে ঘুরে দেখতে পারবেন বানিয়াচংয়ের ঐতিহাসিক কমলা রানীর দীঘি বা সাগর দিঘী, বানিয়াচংয়ের রাজবাড়ী, হব্বা-গোম্মার দারা ঘুটি, মোঘল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনা পুরানবাগ জামে মসজিদ, বিবির দরগা জামে মসজিদ, কালিকাপাড়া জামে মসজিদ ও রাজবাড়ী জামে মসজিদ। এবং ঘুরে দেখতে পারেন পুরো বানিয়াচং পুরো গ্রামটি।
আপনাদের আবারও জানিয়ে রাখছি আমাদের গ্রামটি কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম। আমরা কিন্তু ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ভরা এই গ্রাম। ড. দীনেশ সেন রচিত ময়মনসিংহ গীতিকার অনেক কাহিনি কিন্তু আমাদের বানিয়াচংয়ের অংশ। পল্লীকবি জসিমউদদীনের বিখ্যাত কমলা রানী কবিতা টি বানিয়াচং সাগরদিঘীর পাড়ে বসে রচনা করেছিলেন। এই গ্রামে জন্মনিয়েছেন জগতখ্যাত বাইসাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণকারী ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা মাষ্টার দা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী হেম সেন সুশীল সেনের বাড়ি এই মহাগ্রামে। পৃথিবীর বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা বৃটিশ সরকারে নাইট উপাধিখ্যাত স্যার ফজলে হাসান আবেদের জন্মস্থান এই বানিয়াচংয়ে। কিংবদন্তি প্রয়াত সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দীর বাড়িও আপনারা ঘুরে আসতে পারেন। আপনারা যারা ঢাকা থেকে আসতে চান সরাসরি ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের স্পেশাল বাস আছে অথবা হানিফ, শ্যামলী-এনা বাসে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে হবিগঞ্জ হয়ে বানিয়াচং আসতে পারবেন। হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচংয়ের দূরত্ব ১৮ কি.মি.। হবিগঞ্জ থেকে সিএনজি অটোতে বা ছোট ছোট মিনিবাস আছে সেগুলো চড়ে আসতে পারবেন। সিএনজিতে ভাড়া ৪০ টাকা মিনিবাসে ২৫ টাকা নিবে। যারা সিলেট থেকে আসতে চান সেক্ষেত্রে আপনি বাইকে চড়ে আসতে পারেন। বাসে আসাও সহজ সিলেট থেকে ঢাকাগামী যেকোন বাসে আউশকান্দি নেমে নবীগঞ্জ যেতে হবে ভাড়া নিবে ২০ টাকা। নবীগঞ্জ থেকে আবারও সিএনজি অটোতে ৪০ টাকা ভাড়ায় বানিয়াচং পৌঁছে যাবেন।
লেখকঃ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী, বানিয়াচং।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা