যুগভেরী ডেস্ক :::
দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হিসেবে পরিচিত হাকালুকি হাওর তীরবর্তী যে গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে নৌকার দিঘি হিসেবে পরিচয় বহন করে আসছে। হাওর এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের গরিব মৎস্যজীবী ও কৃষক পরিবারের রুটি রুজির একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। বর্ষা মৌসুমে হাওরে পানিতে টুইটুম্বর হয়ে গেলে হাওর পাড়ের এসব গ্রামে নৌকা চলাচল বেড়ে যায়। কিন্তু বর্ষাকাল শেষে হাওরের পানি কমে গেলে হাওরের নাব্যতা হ্রাসের কারণে এই বাহনটি একসময় নিজেই বিকল হয়ে যায়। হাওরে পানি না থাকায় চলতে না পেরে হাওরের বুক চিরে চলাচলের এই নৌকাগুলো এখন অর্ধেক ডুবন্ত পানিতে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এভাবে হাওরের পানি শুকিয়ে গেলে বছরের পর বছর একটি দিঘিতে শতাধিক নৌকা বিশ্রামের জন্য একত্রে রাখার কারনে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী সাদিপুর গ্রামের এই দিঘিটি নৌকার দিঘিতে পরিণত হয়েছে। পর্যটক সহ স্থানীয়দের কাছে এখন নৌকার দিঘি হিসেবে বেশ পরিচিত।
সরজমিন ৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের অংশে অবস্থিত হাকালুকি হাওর তীরে শতাধিক গ্রাম। তেমনি হাকালুকি হাওর তীরের সাদিপুর গ্রামে অবস্থিত ঘাটেরবাজার এলাকায় রয়েছে বিশাল একটি দিঘি। দিঘির চার পাশে রয়েছে অসংখ্য ছায়াবৃক্ষ। গ্রামের বাসিন্দারা তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে এই হাওরের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল। শুষ্ক মওসুমের কয়েক মাস হাকালুকি হাওর তীরের মানুষের বিকল্প কোন কাজ না থাকায় আর্থিক অনটনে, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। টলমলে স্বচ্ছ জলে মাছের সঙ্গে এখন ঠাঁই নিয়েছে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের শতাধিক নৌকা। শুষ্ক মৌসুম থাকায় আশপাশ কোথায়ও এখন পানি নেই। তাই বিশাল এ দিঘিতে এখন ঠাঁই হয়েছে এসব নৌকার। দিঘির মধ্যে একসঙ্গে অর্ধভাবে ডুবিয়ে রাখা নৌকার সারি অনেক পর্যটকদের কৌতূহলী করে তুলে। নিমজ্জিত এসব নৌকার অপেক্ষা শুধু বর্ষা মৌসুমের। হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভুকশিমইল ইউনিয়নের মিরশংকর, সাদিপুর, উত্তর সাদিপুর, দক্ষিণ সাদিপুর, কুরবানপুর ও গৌরিশঙ্কর এ কয়টি গ্রামের শুষ্ক মৌসুমে অচল হয়ে অলস পড়ে থাকা নৌকাগুলোর নিরাপদ ঠাঁই সাদিপুর ঘাটের বাজার সংলগ্ন মাদরাসার সামনের এই দিঘি। এখন চলছে শুষ্ক মওসুম। নাব্যতা হ্রাসে তাই দেশের অন্যতম হাকালুকি হাওর জুড়ে শুধু ধু-ধু মরুভূমি। ২৩৮টি বিলের এই হাওরটিতে দু’চারটি বিলে কম-বেশি পানি থাকলেও হাওরের মধ্যখানেও নেই পানি। এখন হাওরের মধ্য দিয়ে ছোট গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে বিলের পাড় পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় পানির অবস্থান এখন সেখানে পানির জন্য হাহাকার। পানির জন্য এমন দুর্দশার কথা জানালেন স্থানীয় মৎস্যজীবী, বোরোচাষি ও গরু, মহিষের বাতান মালিকরা। তাই নৌকা চলাচলের জায়গায় এখন চলছে গাড়ি। অকেজে হয়ে পড়েছে নৌকা। ভাটিবাংলার প্রিয় এই (নৌকা) বাহনটি রোদের খরতাপ আর ঘুণপোকাসহ নানা পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে তাই দিঘির পানিতেই ডুবিয়ে রাখেন মালিকরা। এমন অভিনব পন্থা তাদের প্রচলিত পুরোনো রীতি। পুরো শুষ্ক মওসুম পানিতে ডুবানো থাকে এসব ছোট বড় নৌকা। আর কিছুদিন পর চৈত্র মাসের শেষদিকে দিঘির পানি থেকে এসব নৌকার মালিকরা যার যার নৌকা তুলে কাঁদামুক্ত করে এবং টুকটাক মেরামত আর রং তুলির আঁচড় শেষে সচল করবেন পরিবহন কাজের জন্য।
সাদিপুর গ্রামের কৃষক তসিম আলী,গয়াস মিয়া,মৎস্যজীবী সিরাজ মিয়া,বকুল মিয়া ও সায়েদ আলী বলেন, নানা কারণে বর্ষা মওসুমে ভাটি অঞ্চলের এই একমাত্র বাহন নৌকার ঐতীহ্য অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরে এক সময়ের পাল তোলা নৌকার সারি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে নৌকার এই চিরচায়িত দৃশ্য ধরে রাখার জন্য এই দিঘিসহ আশপাশের পুকুর ও ডুবাতে শ’ শ’ নৌকা শুষ্ক মৌসুমে যতœ করে ডুবিয়ে রেখে ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন অনেক মৎস্যজীবী ও কৃষকরা।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা