সিলেট সদর উপজেলার পর এবার খেলার মাঠ ধ্বংসের আয়োজন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। মেলা ও গরুর হাটের নামে দীর্ঘদিন ধরে নগরীর শাহী ঈদগায় সিলেট সদর উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাসের পর মাস বরাদ্দ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার সদর উপজেলার পথ ধরে হাটছে সিলেট সিটি করপোরেশন। আবাসিক এলাকার ভেতরে শাহী ঈদগাহর কালাপাথর খেলার মাঠ এবার পশুর হাটের জন্য ইজারা দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে ইজারা দরপত্র আহবান করাও হয়েছে। এর আগে গত কয়েকবছরে মেন্দিবাগ কয়েদির মাঠে কোরবানির পশুর হাট করায় এখন তা খেলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এবারো কয়েদিও মাঠে পশুর হাট ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পশুর হাট ও মেলার নামে সারাবছর বন্ধ থাকে সদর উপজেলার খেলার মাঠ নামে পরিচিতি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। কালাপাথর মাঠ ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা।
একসময় সিলেট নগরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ছোট-বড় খেলার মাঠ ছিল। সিলেট জেলা স্টেডিয়াম ছাড়াও ফুটবল, হকি, ক্রিকেট খেলার জন্য বড় পরিসরে খেলার মাঠ ছিল। সিলেট রেজিস্টারি মাঠ, সিলেট পুলিশ লাইনস মাঠ, আলিয়া মাদরাসা মাঠ, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মাঠ, কালাপাথর মাঠ, এমসি কলেজ মাঠ, শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ, কয়েদির মাঠ ছিলো অন্যতম। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মাঠগুলোর মধ্যে লালদীঘিরপার গাছতলা মাঠ, বর্ণমালা স্কুল মাঠ, লালমাটিয়া মাঠ, মজুমদারবাড়ির মাঠ, বাগবাড়ী এতিম স্কুল মাঠ, পীর মহল্লার সৈয়দ জিলকদর আলীর মাঠ, বাদামবাগিচা মাঠ, প্রাইমারি টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট মাঠ, রাজবাড়ি খেলার মাঠ, ছড়ারপার খেলার মাঠ, গলফ ক্লাবের মাঠ, আম্বরখানা সরকারি কালোনির মাঠ অন্যতম। এসব মাঠের বেশির ভাগ এখন শুধুই স্মৃতি।
সিলেট নগরীর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ খেলার মাঠে গড়ে তোলা হয়েছে নার্সিং হোম ও ইন্টার্ন আবাসিক ভবন, পুলিশ লাইনস মাঠে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত, সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে করোনার এই সময়ে বাদে বছরজুড়ে ওয়াজ-মাহফিল, বৃক্ষমেলা, সভা-সমাবেশের আয়োজন থাকায় সেখানে আর খেলার সুযোগ নেই। কালাপাথর মাঠের মালিকানা নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডেও মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলমান। নগরের মাছিমপুর কয়েদির হাওর মাঠ লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা।
টিকে থাকা এমসি কলেজের মাঠই এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের শেষ আশ্রয়স্থলগুলোর একটি। যদিও এখানে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষার সময় পানি জমে খেলার অনুপযুক্ত হয়ে যায় মাঠ। এছাড়া কালাপাথর মাঠের মালিকানা নিয়ে মামলা থাকলেও খেলাধূলায় কোনো বাধা নেই কোনো পক্ষ থেকে। এ মাঠের অবস্থান উচুতে হওয়ায় পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থাও ভালো। ফলে সারাবছরই এ মাঠে খেলাধূলা চলে। এ ছাড়া নগরের শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ নিয়ে কয়েক বছর ধরে নানা নাটক চলছে। কয়েক বছর ধরে প্রায় নিয়ম করে এখানে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে এখানে বসানো হয় পশুর হাট। এসব কারণে মাঠটি নিয়মিত ব্যবহার করা সম্ভব হয় না খেলাধুলার প্রয়োজনে।
স্থানীয়রা জানান, সিলেটে এমনিতে মাঠের সংকট। সারাবছর খেলাধূলার উপযুক্ত অন্যতম মাঠ হচ্ছে কালাপাথর মাঠ। সিলেটের হয়ে জাতীয় দলে আলো ছড়ানো ক্রিকেটার, ফুটবলাররা এ মাঠকে হোমগ্রাউন্ড মনে করেন। কিন্তু সিলেট সদর উপজেলা শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ যেমন ধ্বংস করেছে, এবার সিটি করপোরেশন কালাপাথর মাঠ ধ্বংসে নেমেছে। গত কয়েকবছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও দুর্নীতিবাজদের মদদে মাঠে এককোনে পশুর হাট বসানো হলে তার ক্ষত এখনো বয়ে চলছে মাঠটি। ওই অংশ খেলার অনুপযুক্ত ছিলো দীর্ঘদিন। এভাবে সিটি করপোরেশন সামান্য রাজস্বের জন্য মাঠ ধ্বংস করতে পাওে না। এছাড়া আবাসিক এলাকার ভেতরে কোরবানির পশুর হাট হলে এলাকাবাসীও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
কালাপাথর মাঠের পরিবেশ রক্ষায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কালাপাথর ফুটবল একাডেমির ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা। তারা মানববন্ধনে সিটি করপোরেশনের এ হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আরিফ আহমদ, আতিকুর রহমান লাবু, আজিজুর রহমান, কিবরিয়া আহমদ, ওয়েস আহমদ। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা