যুগভেরী রিপোর্ট
সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলার ৬ উপজেলায় পাহাড় কাটা বন্ধ ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ১৫ জন বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
‘বেলা’র আইনজীবী সাঈদ আহমদ কবির স্বাক্ষরিত এ নোটিশ সোমবার (১১ অক্টোবর) ডাকযোগে ১৫ জন জনপ্রতিনিধি ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই ১৫ জন হচ্ছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুুল হক চৌধুরী, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, ভূমি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেট জেলা প্রশাসক, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক এবং সিলেট সদর উপজেলা, গোয়াইনঘাট উপজেলা, বিয়ানীবাজার উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, জৈন্তাপুর উপজেলা ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বেলার নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা যথা- সিলেট সদর, গােয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর এবং গােলাপগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যমান পাহাড়-টিলা কর্তন রােধে ২০১১ সালে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ৫৭৫০/২০১১) দায়ের করে। মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ মার্চ আদালত উল্লেখিত এলাকাসমূহে অবস্থিত পাহাড়/টিলা কর্তন থেকে রক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে পাহাড়-টিলা কর্তনের সঙ্গে জড়িতদের শান্তি প্রদান, পাহাড়ে বিদ্যমান দখলদার উচ্ছেদ এবং পুনরায় অবশিষ্ট পাহাড়-টিলা কর্তন রােধ ও পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু সুস্পষ্ট এ নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সিলেট জেলার মামলাভুক্ত বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটা চলছে- এমন সংবাদ গণমাধ্যমমে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ অনুযায়ী- বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে টিলা-পাহাড় কাটা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি দুগ্ধ খামারের তিনটি টিলা কেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা ভবন, শিক্ষক ভবন, ছাত্রছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হবে বলেও জানা গেছে। ইতােমধ্যে তিনটি টিলার মধ্যভাগ পর্যন্ত কাটা হয়েছে অর্থাৎ মােট পাঁচ একর জায়গার মধ্যে অন্তত তিন একর জায়গার টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে টিলা কেটে টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তা নির্মাণ করতে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী- সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার করের পাড়া, হাওলাদারপাড়া, বালুচর, তারাপুর, বাদামবাগিচা, বনকলাপাড়া, শাহী ঈদগাহ, সদর উপজেলার টিলাগড়, খাদিম বাগমারা, জালালাবাদ, এয়ারপাের্ট এলাকা, টুলটিকর, মেজরটিলা, শাহপরান ও বড়শলা, জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর, বারমাটি, ঠাকুরের মাটি, চিকনাগুল ও বাঘেরখাল, গােয়াবাড়ী ও কমলাবাড়ী এলাকা, গােয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাম নগর, গােলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জ, ঘােষগাঁও, ঢাকা দক্ষিণ, রনকেলি, বাঘা ও ধারাবহর এলাকা ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় টিলা কাটা চলছে অবাধে।
দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাহাড় কর্তন বা মােচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাহাড় কাটা বন্ধে আইনের এ বিধানের সঠিক প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে ও কার্যকর রাখতে ‘বেলা’র পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার ফলে পাহাড় কাটা বন্ধে নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। আদালতের এ নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে সক্ষম হননি।
এমতাবস্থায় নোটিশের মাধ্যমে ‘বেলা’র পক্ষ থেকে সিলেটে পাহাড়, টিলা ও পাহাড়ি বন কাটা বন্ধ এবং পাহাড়ে নির্মিত সকল স্থাপনা নির্মূল/উচ্ছেদ করতে দ্রুত কঠোর ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট জেলা প্রশাসকসহ ১৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি বরাবরে অনুরােধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া ইতােমধ্যে যেসব এলাকায় পাহাড়-টিলা কাটা হয়েছে সেখানে বৃক্ষরোপণের দাবি জানিয়েছে ‘বেলা’।
নোটিশপ্রাপ্ত ১৫ জনকে আগামী ১৭ অক্টোবর ‘বেলা’র আইনজীবী সাঈদ আহমদ কবির বরাবরে নোটিশের জবাব দিতে ও গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযােগে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা