সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীর অভিযোগ
যুগভেরী ডেস্ক ::: সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো নোটিশ ছাড়া অন্যায়ভাবে এক প্রবাসীর বাসাবাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। মেয়র আরিফের এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফৌজধারী মামলা করারও ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
মঙ্গলাবার (৭ ডিসেম্বর) সিলেট নগরের জেলরোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জুনু মিয়া। তিনি দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। সিলেট নগরেও তাঁর বাসা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জুনু মিয়া বলেন, সিলেট নগরের মিউনিসিপ্যাল মৌজাধীন সোবহানীঘাট এলাকায় ৭ শতক ভূমি নিজের ছেলে মো. সজলুল আমিন, মো. রুহুল আমিন ও মো. জহিরুল আমিনের নামে এবং তার খালাতো ভাই সিলেটের গোলাপগঞ্জের তোফায়েল আহমদ ও ফয়জুল আহমদ আরও ৭ শতক ভূমি পৃথক দলিলে ক্রয় করেন। এ ভূমির মূল মালিক ছিলেন নরেশ চন্দ্র দত্ত সেনাপতি। তিনি গত ১৯২৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রসময় চৌধুরী ও রজনী ভূষণ চৌধুরী নিকট এ ভূমি বন্ধক রাখেন। সময়ের পরিক্রমায় এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে রজনী কান্তি চৌধুরী ওই ভূমির একক মালিক ও স্বত্বাধিকারী হিসাবে ভোগদখলে থাকা তার একমাত্র ছেলে রণধীর চৌধুরীকে উত্তরাধিকারী রেখে মারা যান। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভূমি বরন্ডি হিসাবে ভূলভাবে সিলেট মিউনিসিপ্যালিটির নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যানকে বিবাদি করে মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ১৯৬৯ সালের ২৭ জুন মাননীয় আদালত পৌরসভার বিরুদ্ধে রায় দেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর রনধীর চৌধুরী ২৫ পয়েন্ট ৫০ শতক ভূমির মধ্যে গুল মোহাম্মদের নামের একজনের কাছে ১২ শতক ভূমি বিক্রি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুনু মিয়া আরও বলেন, গুল মোহাম্মদ ১৯৬৮ সালের ৫ মে আলতাব উদ্দিনের নিকট তার অংশ ১২ শতক ভূমি বিক্রি করেন। মোহাম্মদ আলতাব উদ্দিন আহমদ ১৯৮২ সালের ১ এপ্রিল ও ওই বছরের ২৭ এপ্রিল ৬ শতক করে মোট ১২ শতক ভূমি আরকান আলী নামের একজনের কাছে বিক্রি করেন। অপরদিকে আব্দুর রহিম ও ওমর উদ্দিন আহমদ নামের আরও দুজন আরও ১২ শতক ভূমি আরকান আলীর নিকট বিক্রি করেন। এরপর থেকে আরাকান আলী এই ২৪ শতক ভূমির একক মালিক ও দখলকার হন।
জুনু মিয়া বলেন, আরকান আলী ১৯৯৬ সালের ১৮ জুন ৭ শতক ভূমি আমাদের নিকট বিক্রয় করেন। আমার ছেলে সজলুল আমিনসহ আরও কয়েকজন দখলদার মালিক হিসেবে নামজারী ও পৃথক খতিয়ানভুক্ত এবং খাজনা প্রদান করে গত জরিপে আমাদের নামে রেকর্ড করান। এরপর থেকে তারা প্রকৃত মালিক হিসেবে ওই ভূমি ভোগদখল করে আসছেন। আমরা খাজনা পরিশোধ করে নামজারিক্রমে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার মাধ্যমে ম্যাপ অনুমোদনের পর গত ২০০১ সালে ওই জায়গায় ঘর নির্মাণ করি।
এদিকে, আরকান আলী ২০০১ সালে মারা গেলে তার উত্তারধিকারীগণ আরও ৭ শতক ভূমি আমার খালাতো ভাই তোফায়েল আহমদসহ কয়েকজেরন নিকট বিক্রি করেন। আমার ছেলে ও তোফায়েলদের দখল থাকা মোট ১৪ শতক ভূমির উপর একটি চক্রের কুনজর পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তোফায়েল ও আমরা ছেলেদের নামজারীকৃত ভূমি কোনো প্রকার নোটিশ বা আইনানুগভাবে অবগত না করে নামজারি বাতিল করেন। আমাদের ভূমি অন্যায়ভাবে ও বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে ওই ভূমিখেকো চক্র সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে ভ্রান্তধারণা দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের রেকর্ড বাতিল হওয়া সত্ত্বেও সেই বাতিলকৃত রেকর্ডের অজুহাতে বেআইনিভাবে নানা কার্যক্রম চালানো হয়।
সর্বশেষ আমাদের নামের রেকর্ড বাতিল করে সিটি কর্পোরেশনের নামে রেকর্ড বহালের জন্য সিসিকের পক্ষে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে গত ২০১৭ সালে আবেদন করলে তদন্তের জন্য চার্জ অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমের নিকট ন্যস্ত হয়। মাহবুবুল আলম ২০১৮ সালে সিটি কর্পোরেশনের আবেদনটি খারিজ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুনু মিয়া আরও বলেন, প্রায় ৫৩বছর আগে আদালতের রায়ে উক্ত ভুমির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের অবসান হলেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজ ক্ষমতাবলে আমার ও আমার খালাতো ভাইদের বাসাবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেন। এ বিষেয়ে আগে কোনো নোটিশ দেননি বা আদালত থেকে উচ্ছেদের কোনো আদেশও দেখাননি। মেয়র নিজে বাদি হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমি আমার জায়গা উদ্ধারের জন্য এবং অন্যায়ভবে আমার বাসাবাড়ি ভেঙে ফেলায় মেয়র আরিফের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তদন্তকরে ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানাাচ্ছি।
পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন জুনু মিয়া।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা