
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল একটি মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আমাদের স্বাধীনতা কেবল ভৌগোলিক সীমানার অর্জন নয়, এটি ছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের ঘোষণা, শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির অঙ্গীকার। সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শক্তি আজও বাংলাদেশের রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এ কারণেই বলা হয়—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। অপরদিকে, যে দল স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, যে দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়েছিল, যারা ধর্মের আড়ালে বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি চালিয়েছে—সেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম আজও নানা কৌশলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে চলেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়; এটি হলো এই জাতির মুক্তির আন্দোলনের মূল অভিভাবক। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে জনগণের রায় এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—সব কিছুর নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশ কল্পনাই করা যেত না। আওয়ামী লীগের মূল দর্শন ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ—যা একদিকে বাঙালির আত্মপরিচয় দিয়েছে, অন্যদিকে জাতিকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কুসংস্কারমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন। আওয়ামী লীগ সেই দায়িত্ব আজও পালন করে চলেছে। উন্নয়ন, প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার—সব ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগের অবদান জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক ভূমিকায় পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই দলটি প্রকাশ্যে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হয়েছিল। রাজাকার, আলবদর, আলশামস—সব কুখ্যাত বাহিনী পরিচালনা করেছিল জামায়াত। তারা কেবল স্বাধীনতার বিরোধিতা করেনি, বরং মুক্তিকামী জনগণকে হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।
স্বাধীনতার পরও জামায়াত তাদের পুরোনো আদর্শ পরিবর্তন করেনি। তারা আজও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করে। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ইসলাম ধর্মকে তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে—যেখানে প্রকৃত ইসলাম শান্তি, মানবতা ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেয়।
জামায়াতের রাজনীতির মূল হাতিয়ার হলো ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানো। তারা সমাজে নানা কুসংস্কার ছড়িয়ে দেয়—মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, নারীর কর্মসংস্থানকে ‘অশ্লীলতা’ বলে আখ্যা দেয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বলে অপপ্রচার চালায়। অথচ এ ধরনের কুসংস্কার কেবল সমাজকে পিছিয়ে দেয়।
একটি বাস্তব উদাহরণ হলো—জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তারা মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন না করে বরং উগ্রবাদ ছড়ানোর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ কারণে মাদরাসার অনেক শিক্ষার্থী মূল ধারার সমাজে মিশতে পারেনি, বরং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এটি ছিল জামায়াতের পরিকল্পিত কৌশল, যাতে তারা অশিক্ষিত ও বিভ্রান্ত জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে, তখন জামায়াত সবসময়ই পিছনে টেনে ধরার ষড়যন্ত্র করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে জামায়াত প্রকাশ্যে সহিংস আন্দোলন চালিয়েছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। একাত্তরের হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে তারা আবারও প্রমাণ করেছে যে জামায়াত কখনোই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে ধারণ করতে পারেনি।
জামায়াতের আরেকটি কৌশল হলো তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নানা ভুয়া প্রচার চালায়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। তারা চায় নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভুলে যাক, যাতে তাদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।
এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে-কোন রাজনীতি আমাদের দেশকে এগিয়ে নেবে? মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নভিত্তিক রাজনীতি, নাকি ধর্মভিত্তিক প্রতারণার রাজনীতি? ইতিহাস বলছে-ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সবসময় দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রই ভেঙে গিয়েছিল ধর্মের নামে বৈষম্যের কারণে। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে। তাই এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কোনো স্থান নেই।
জামায়াত কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়; এটি একটি মানসিকতার নাম। সেই মানসিকতা হলো—স্বাধীনতার বিরোধিতা করা, কুসংস্কার ছড়ানো, ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণকে প্রতারিত করা। এই মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিটি প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। স্কুল-কলেজে মুক্তিযুদ্ধের পাঠ আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কেবল শাসন করা নয়; বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। আধুনিক শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন—এসব ক্ষেত্রে আরও জোর দিতে হবে। কারণ জামায়াত সবসময় অশিক্ষা ও দারিদ্র্যকে ব্যবহার করে তাদের রাজনীতি চালায়। জনগণ যত শিক্ষিত হবে, সমাজ যত আধুনিক হবে—ততই জামায়াতের কুসংস্কারমূলক রাজনীতি দুর্বল হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল ইতিহাস নয়; এটি আমাদের অস্তিত্বের মূল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সেই অস্তিত্বকে রক্ষা করে চলেছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি হিসেবে সবসময় জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে, এখনও চাচ্ছে। তাই জনগণকে সজাগ থাকতে হবে—যাতে ধর্মের নামে কেউ আমাদের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস—বাংলাদেশের জনগণ সবসময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরবে। জামায়াতের মতো প্রতারণার রাজনীতি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবেই। কারণ এই দেশ কারও ভণ্ডামির জন্য সৃষ্টি হয়নি; এই দেশ সৃষ্টি হয়েছে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের নেতৃত্বে, স্বাধীনতার পতাকার নিচে।
লেখক :
আহবায়ক : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
জাউয়াবাজার ইউনিয়ন শাখা, ছাতক, সুনামগঞ্জ।