যুগভেরী ডেস্ক ::: চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ততার বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিলেট ছাত্রলীগকে। এনিয়ে হামলা-সংঘাতও লেগে আছে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা চিনি চোরাচালানে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়ার জেরে এবার সিলেটের বিশ্বনাথে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে বিশ্বনাথ পুরান বাজারে এঘটনা ঘটে।
দু’পক্ষের এক পক্ষে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি পার্থ-সারথী দাস পাপ্পু আর অন্য পক্ষে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন। এতে পার্থ-সারথী দাস পাপ্পুসহ উভয় পক্ষে ১০জন আহত হয়েছেন। এঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ বুধবার বিকেলে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কমিটি বিলুপ্তির খবরে ওইদিন বাদ-আছর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন ও কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রুকন তাদের পক্ষের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্বনাথে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। আর ওই মিছিলের পর ক্ষুব্ধ হযে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদককে চিনি চোরাচালানী ও অস্ত্রবাজ আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি পার্থ-সারথী দাস পাপ্পু তার ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেন।
এই স্ট্যাটাস দেখে ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন ও সিরাজুল ইসলাম রুকনের নেতৃত্বে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টারদিকে পুরানবাজারস্থ ছাত্রলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে পাপ্পুর উপর হামলা করেন। এসময় পাপ্পুসহ তার পক্ষের ছাত্রলীগ নেতা আবীর আহমদ, মাফুজুর রহমান সালমান, রাজীব আহমদ, মাছুম খানসহ ৮জন আহত হন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হামলার খবর পেয়ে সিলেটের ওসামনীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবারও নিজ বলয়ের নেতার্মীদের নিয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পাপ্পু। এসময় পুলিশের সামনে জাকির পক্ষের ছাত্রলীগের নেতারা আবারও তাদের ধাওয়া করে।
এসময় মিছিল ভেঙে দৌঁড়ে গিয়ে ইন্তাজ আলী মার্কেটের নিচতলায় দক্ষিণ বিশ্বনাথ ফুটবল একাডেমীর অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন পাপ্পু। সেখানে গিয়েও জাকির পক্ষের নেতারা তার উপর হামলা চালান এবং অফিসের টেবিলের গ্লাস ভাঙচুর করেন। সর্বশেষ রাত ১০টায় পাপ্পুকে থানা পুলিশের সহযোগীতায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এঘটনায় বিশ্বনাথ পৌর শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি পার্থসারথী দাস পাপ্পু বলেন, টাকার বিনিমেয় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। আর সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের মদদে পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু আহমদ খান ও ছাত্রলীগ নেতা জাকিরের নেতৃত্বে তার উপর তিনদফা হামলা করা হয়। এসময় উপজেলা ছাত্রলীগের অফিসসহ আরও একটি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় তার পক্ষের ১৫জন আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে কটুক্তি করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস ও তাদের বিরুদ্ধে পার্থ-সারথী দাস পাপ্পু মিছিল দিতে চাইলে তারা ধাওয়া করেছেন, তবে হামলা করেননি। পাপ্পু পক্ষের হামলায় তাদের দু’জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে সিলেটের ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান পিপিএম বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ একদল পুলিশ প্রায় ৩ঘন্টা মাঠে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এরআগে ১০ আগস্ট রাতে সিলেট নগরের দারিয়াপাড়া এলাকায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রবাল চৌধুরী পূজনের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তিনি সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সম্প্রতি ঘোষিত কয়েকটি কমিটি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করে পোস্ট দেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধভাবে নিয়ে আসা চিনির ব্যবসায় ছাত্রলীগের কিছু নেতা জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেন। এর জেরে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা