যুগভেরী ডেস্ক ::: ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আগামী দিনে বিএনপির নাম-নিশানাও থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সোমবার দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, শেখ ফজলুল হক মণি'র ৮৫তম জন্মদিবসের স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, "মাওলানা ভাসানী ন্যাপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনি মুরব্বি মানুষ। আমি ওনার সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চায়না যে রকম ইঙ্গিত দিয়েছিলো উনি সে মোতাবেক চলতেন। এর আগে পাকিস্তান ও আইয়ুবের প্রশংসাও গেয়েছিলেন। সত্তরের নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মাওলানা ভাসানী ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামে সাইক্লোনে অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিল, যে দশটি জায়গায় সাইক্লোন হয়েছে সেখানে নির্বাচন পরে হবে। কিন্তু নির্বাচন না হলে পাকিস্তান তো আরো বেনিফিটেড হবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললো, আমি নির্বাচনে যাবো। এই বাংলায় কে নেতৃত্বে দেবে? সবাই বড় নেতা। অহিদুজ্জামান বড় নেতা। ছবুর খান বড় নেতা। ফকা চৌধুরী বড় নেতা। শাহ আজিজ বড় নেতা। তারা মুসলিম লীগের সাথে ছিল। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। তোমরা ইলেকশনে আসো বা না আসো। তোমরা সত্তরেও আসোনি। তাতে কি হয়েছে? মাওলানা ভাসানীর ওই দলটা এখন আর আছে? একইভাবে এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, সামনের দিনে তোমাদের নাম-নিশানা-ঠিকানাও থাকবে না।" জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করতে বিএনপি গঠন করেছিল মন্তব্য করে শেখ সেলিম বলেন, "বিএনপির জন্ম কোথা থেকে হয়েছে? ক্যান্টনমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা হয়েছে আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তানী ভাবধারায় চলবো, সেই চিন্তা-চেতনা থেকে। বিএনপির সমর্থক ছিল যত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস। আরেকটা হল মাওলানা ভাসানী পার্টি- ন্যাপ । জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে। মোস্তাক হলো ন্যাপের সমর্থক। জিয়াউর রহমান যখন পার্টি গঠন করছে তখন ফখরুল ইসলাম, খোকা, মান্না ছাত্র ইউনিয়ন করতো। এটা নিয়েই সে বিএনপি করেছে। এদের উদ্দেশ্য হলো বঙ্গবন্ধু ও এদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।" সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ও শেখ ফজলুল হক মণি'র ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস তাঁর প্রয়াত পিতাকে বাংলাদেশের চে গুয়েভারা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মণি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বাংলার বাণীকে একটি আধুনিক ও জনপ্রিয় পত্রিকায় রূপান্তরিত করেন। সেই পত্রিকায় তিনি নিজেই সম্পাদকীয়সহ প্রবন্ধ লিখতেন। সেক্ষেত্রে তিনি সরকারকেও ছাড় দেননি। তিনি বিপ্লবী চেতনার মানুষ ছিলেন। যদি তৎকালীন সমসাময়িক নেতৃবৃন্দের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়- তৎকালীন সবচেয়ে মেধাবী, প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ মণি'র নেতৃত্বে গঠিত মুজিব বাহিনী সারাবিশ্বের অন্যতম গেরিলা ফোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল উল্লেখ করে মেয়র বলেন, "শেখ মণি যেমনি হুলিয়া মাথায় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াস হিসেবে সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন, মেধাবী ছাত্রনেতা তৈরি করেছেন তেমনি ২৬ শে মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পরেই আগরতলা গিয়ে মুজিব বাহিনী গঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু সবাইকে যুদ্ধের নকশা, পরিকল্পনা সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন। ভারতে গিয়ে কোন বাসায় উঠতে হবে? কার সাথে দেখা করতে হবে? কিভাবে যুদ্ধ হবে? কিভাবে দেশ স্বাধীন হবে? সব কিছু তিনি বুঝিয়ে দিলেন। তারপরে বাবার কাছে বঙ্গবন্ধু একটা চিরকুট দেন। সেই চিরকুটের বদৌলতে বাবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে এককভাবে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার মুজিব বাহিনীকে সকল রকম অস্ত্র, প্রশিক্ষণ সবকিছুই দেন এবং মুজিব বাহিনী হয়ে ওঠে সারাবিশ্বের মধ্যে ঐতিহাসিক একটি গেরিলা ফোর্স। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ ফজলুল হক মণি সম্পাদিত 'বাংলাদেশে গণহত্যা' এর ইংরেজি ভার্সন এবং স. ম. ইফতেখার মাহমুদ ও মাহমুদুল আলম তারেক সম্পাদিত 'শেখ মণি'র কথামালা' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস)
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা