
স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকদক্ষিণবাসীর আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। কেউ কেউ আবার পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন আর কত পরিবার দেশ ত্যাগ করবে কে জানে?
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকাদক্ষিণে দিন দিন রেজা, মুরাদ, উজ্জল গ্রুপের অপতৎপরতা বেড়েই চলছে । আগে রেজাউর রহমান ওরফে রেজা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রেজাউর রহমান খোলস বদলে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। নতুন দলে যোগ হয়ে তার অপতৎপরতা আরও বৃদ্ধি করেছেন। বর্তমানে দলের নেতাদের ম্যানেজ করে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ে ক্ষমতা খাটাচ্ছেন তিনি। এলাকায় একাধিক পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছেন তিনি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রেজা অবৈধ সকল কাজ করে। কিন্তু তিনি কোনো সাক্ষী রাখেন না। সে ফিল্মি স্টাইলে কাজ করে। রেজা নিজের এলাকার মানুষকে দাস বানিয়ে রেখেছে। গ্রামে নিজের বিশ^স্ত লোক আলমকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করাচ্ছেন। রেজাউর রহমানের বিরুদ্ধে তার আপন মামার অর্ধেক বাড়ি দখল করার অভিযোগ রয়েছে। আপন মামার বাড়ির সম্পত্তি গ্রাস করতে মামার পরিবারকে অনেক ভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে অপদস্থ,লাঞ্ছিত করেছিলেন। ঘরের মহিলাদেরকেও ছাড় দেননি। তার নির্যাতনের জন্য তার মামাতো ভাই আবু তাহের স্ত্রী ও অবুঝ দুটি বাচ্চাসহ দেশ ছেড়ে চলে যান। তিনি এতটা নিষ্ঠুর যে, সেসময় কোলের বাচ্চাদেরকেও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। রেজাউর রহমানের কারণে অনেক পরিবার আজ স্বজন ছাড়া থাকছেন। তিনি আরও বলেন, এলাকায় আগে মনসুর রেজ,া সেলিম বাহিনীর আধিপত্য ছিল। আর এখন মুরাদ, রেজা, উজ্জ্বল বাহিনী পুরো গোলাপগঞ্জ জুড়ে দখলদারিত্ব করছেন। তিনি বলেন গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ বারকোটে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আব্দুল হামিদের ছেলে ফাহিম আহমদকে তার ফুফাতো ভাই জিলাল উদ্দিনের ছেলে সাঈদ আহমদ ও তার পরিবার হত্যা করে পালিয়ে যায়। আর ফাহিম আহমদের মতো সন্ত্রাসীদেরকে রেজারাই লালন করেন। তাদের নিষ্ঠুরতা চলছেই , কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের পুরো বাহিনী মিলে প্রতিবাদকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় তিন মাস রেজা বাহিনী আত্মগোপন ছিলেন। তবে এরপর ফের সক্রিয় হয়েছেন। এখন দিনে দুপুরেও চাঁদাবাজি চলছে। শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতারা রয়েছেন তাদের সাথে। তারা সাংবাদিক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা কিংবা প্রতিবেদন করলে তাদের স্থানীয় অফিস অথবা রাস্তায় আক্রমণ করে। প্রাণনাশের হুমকি এমনকি মারধর করে পঙ্গু করে দেয়। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। এমনকি থানায় গিয়ে মামলা করার কেউই সাহস পায় না। স্থানীয়রা এমন অত্যাচারী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও আমাদের দেশে উপদেষ্টারা কেউ আছেন অ্যাওয়ার্ড নিয়ে, কেউ আছেন ইন্ডিয়াতে গিয়ে ডিগ্রি নিতে আবার কেউ আছে লাল গালিচায় সংবর্ধনা নিতে। দেশের প্রতি কারও দায়বদ্ধতা নেই। শুধু বিদেশে গিয়ে প্ল্যান দিচ্ছেন, নির্বাচন দিবেন, দেশকে পরিবর্তন করবেন,অন্যরকম বাংলাদেশ গড়বেন ইত্যাদি।
আমরা কিছুই দেখি না, আমরা দেখি নির্যাতন, খুন,দর্শন, লুটপাট, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারি, গুম, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি । দেশ দিন দিন বর্বর যুগের দিকে যাচ্ছে । দেশের কোথাও শান্তি নাই । এ দেশ ছেড়ে চিরতরে পালিয়ে যাওয়াই উত্তম।
এ ব্যাপারে উপজেলার একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, দেশ বর্তমানে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের মধ্যেও কোনো স্থিরতা নেই। মব সৃষ্টি করে প্রশাসনকেও ভয় দেখানো হচ্ছে। এজন্য আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, রেজাউর রহমানের মতো মানুষ সুযোগ সন্ধানী। যে সরকারই আসুক তারা তাদের রং বদলে নিয়ে ও সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম অব্যাহত রাখে।