সিলেটের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। চিকিসৎক-নার্স সংকট, যন্ত্রপাতির সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভোগান্তিতে রয়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা।
বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও জনবল না থাকায় তাদের হতে হচ্ছে সিলেটমুখী। আবার
সিলেটে এসেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কেবল সিলেট নয় ব্যাপক জনবলসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশের স্বাস্থ্য খাত। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে ৩২ শতাংশ পদ খালি। খালি পদের মোট সংখ্যা ৭৭ হাজার ৮৭৭। খালি পদের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে ৪০ শতাংশ পদে কোনো মানুষ নেই।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে শূন্য পদের এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য জনবল কৌশলপত্র ২০২৪’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এই কৌশলপত্র প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত মোট ৩৩ শ্রেণির পদ আছে। এসব শ্রেণিতে মোট পদের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭১১টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৪ পদে জনবল আছে। পদ খালি আছে ৭৭ হাজার ৮৭৭টি। অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতে শূন্য পদ ৩২ শতাংশ।
শূন্য পদের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে পদ আছে ১৪ হাজার ৫৩৬টি, এর মধ্যে ৫ হাজার ৮২৭ পদে কোনো জনবল নেই। অর্থাৎ শূন্য পদ ৪০ শতাংশ। শূন্য পদের হার সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। এই বিভাগে পদ আছে ১৫ হাজার ৯৭৬টি। এর মধ্যে শূন্য পদ ৪ হাজার ২২৬টি। শূন্য পদ ২৬ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শ্রেণিতে শূন্য পদের হার বেশি। এটি ৬২ শতাংশ। চিকিৎসকদের পদ খালি ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ৪০ শতাংশ পদে লোক নেই।
জনবলের এই সংকটের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেবা গ্রহণকারীকে, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ বা রোগীকে। অন্যদিকে কাজের চাপ পড়ে অন্যদের ওপর অর্থাৎ যারা কাজ করছেন।
কৌশলপত্র বলছে, চিকিৎসকদের মধ্যে বাড়তি চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ে মেডিসিন, শিশুস্বাস্থ্য, অবেদনবিদ, স্ত্রীরোগ ও শল্যচিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের ওপর। নার্সদেরও প্রবল চাপে থাকতে হয়, নার্সিং সেবার বাইরে তাঁদের অন্য কাজও করতে হয়।
এদিকে, কাগজে কলমে সিলেট বিভাগে ৪০ শতাংশ পদ খালি থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা আরো বেশি। কারণ, অনেকে দীর্ঘদিন ধরে অননুমোদিত ছুটি ও সাময়িক বরখাস্ত বা প্রেষণে অন্য জেলায় কর্মরত রয়েছেন।। যা শূন্যপদ হিসেবে ধরা হয়না।
সূত্র বলছে, উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের জুনিয়র কনসালট্যান্টের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য রয়েছে বেশি। এর বাইরে প্রতিটি হাসপাতালেই রয়েছে নার্সের তীব্র সংকট। মূলত এ দুটি কারণে জেলার স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত সিলেটভিউ-কে বলেন, সিলেটে স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের জনবল সংকট রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকট বেশি। অন্যান্য খাতে সংকট রয়েছে তবে তা অতটা তীব্র নয়। তিনি জানান, সম্প্রতি সিলেট জেলায় স্বাস্থ্য খাতে ৪র্থ শ্রেণিতে ১শ ৬৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে সংকট কিছুটা কমে এসেছে। অন্যান্য খাতেও নিয়োগ দেয়া হবে শিগগির।
তিনি জানান, সিলেটের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি চিকিসৎকের। কারণ হিসেবে তিনি বলেন নিয়োগ কম হওয়া। তাছাড়া নিয়োগ হলেও সিলেটে থাকার আগ্রহ কম চিকিৎসকদের। অনেকে আবার দেশের বাইরে চলে যান উচ্চ শিক্ষার জন্যে। যদিও এমন চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, চিকিৎসক ও নার্সের ক্ষেত্রে শূন্য পদের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। যেসব চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে অননুমোদিত ছুটিতে রয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শূন্য পদের সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা