স্টাফ রিপোর্টার: সাবেক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব জামশেদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী শিশির মনির নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের স্বার্থে, উৎসাহ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে যে মেধাবৃত্তির উদ্যোগ নিয়েছে এটা গর্বের। শিক্ষা গ্রহন করার একটা উদ্যম থাকতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য কোটি কোটি টাকা বহন করে। কিন্তু ভাটি এলাকা শাল্লার দ্বারপ্রান্তে আসে কিনা জানিনা! তবে শাল্লার প্রতি সুদৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করেন সুনামগঞ্জের এডিসি শিক্ষা ও আইসিটি-কে। ২০১৩ সালে যুগ্ম সচিব থেকে তৎকালীন সরকার আমাকে অবসরে পাঠায়। বর্তমান সরকার আমার সম্মানটুকু পুনরুদ্ধার করেছে। আমি গত ৯ তারিখে সদ্য সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় (গ্রেড-১) সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি৷ আমার সচিব হওয়ার এই সম্মান আপনাদের নিকট সমর্পণ করলাম। আমি আপনাদের সন্তান যেকোন প্রয়োজনে আমি ও আমার ভাই শিশির মনিরকে পাবেন। শিশিরের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ভালবাসা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করবেন এবং তার ভালবাসা নিবেন। এই প্রসঙ্গে শেক্সপিয়ারের একটি উক্তি প্রকাশ করে বলেন, ভালবাসা চোখে দেখার বিষয় না, এটা অন্তর থেকে অনুভূতির বিষয়। আপনাদের জন্য ভালবাসা শিবিরের অন্তর থেকে আসছে।
শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে ও শিক্ষিকা চম্পা তালুকদার এবং সংবাদকর্মী আমীর হোসেনের সঞ্চালনায় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে দিরাই-শাল্লা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত শাল্লার টিএনটি মাঠে শিশির মনির মেধাবৃত্তি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, শিক্ষার্থীরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে এই প্রশান্তির গভীরতা একমাত্র নিজের বাবা-মা বুঝে। ছোটবেলা থেকে লোভকে পরিহার করে সৎভাবে গড়ে উঠো।ছোট্ট জীবনে নিয়মানুযায়ী সবকিছু পাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সমাজে শিক্ষিত লোক সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ। বড় বড় কর্মকর্তারা চাইলে শাল্লার জমিনে সততার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে৷ তোমরা আইনজীবী, ডিসি, এসপি, সচিব, বিচারক বড় কর্মকর্তা হয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা যেন বলতে পারি ২০২৫ সালে বৃত্তিপ্রাপ্ত এই সন্তান আমাদের শাল্লার। তোমাদের প্রতি এই ভালাবাসা নিখুঁত। আমরা নতুন প্রজন্মের মানুষকে বড় মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। শাল্লার অনেক মানুষ বিভিন্নভাবে এক্সপার্ট এবং সুপরিচিত। তোমরা পড়াশোনা, জ্ঞান, ব্যক্তিত্ত্বে, চিন্তাভাবনা, উদারতায় বড় হও কিন্তু সংকীর্ণ হইও না। কোন ধর্মের ভিত্তিতে কিছু করা যাবেনা। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই হবে মূল বিবেচ্য বিষয়। আমি অন্যজনের ছেলে কিন্তু আমার সুধীর স্যার ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণিতে তুলে স্কলারশীপ পাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এমন শিক্ষকই সবার হওয়া প্রয়োজন৷ শিক্ষকদের রাজনীতি করা উচিত না, যদি কেউ সংকীর্ণ রাজনীতিতে জড়ায় তাহলে শিক্ষার পরিবেশ অনিবার্য ব্যাহত হয়। তবে আমি মনে করি আদর্শ মানুষ হিসেবে শিক্ষা দেওয়াটাই হবে মূল কাজ৷ শাল্লার কিছু স্কুল আছে শিক্ষার পরিবেশ ভাল না নানান দুর্নীতির কথা শুনা যায়। এখানে উপস্থিত এডিসি শিক্ষা মহোদয়কে বলব, শিক্ষকরা যেন স্বাধীন ও ভালভাবে পড়ালেখা করাতে পারে সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার অনুরোধ রইলো৷ আমার ও আমার ভাই জামশেদ আহমেদ সদ্য সিনিয়র সচিব হয়েছেন আপনাদের জন্য সবসময় ভালবাসা ও সহযোগিতা থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি সুনজিত কুমার চন্দ, সুনামগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী এড. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন, আইনজীবী হেলাল উদ্দীন, দিরাই-শাল্লা উন্নয়ন ফোরামের উপদেষ্টা নুরে আলম সিদ্দিকী, সিলেট ইবনেসিনা হসপিটালের ইনচার্জ রেজাউল ইসলাম, ভাটি বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ রন্টু কুমার দাস, শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তরুন কান্তি দাশ, গোবিন্দ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিপাল দাশ মিল্টন, জাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনাদি তালুকদার, শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পল্লবী চৌধুরী, শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌভিক দাশ শায়ন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস, থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ওয়ালী আশরাফ খান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস রায়, সাউধেরশ্রী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাস, শাল্লা হাসিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুল ইসলাম সহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গণমাধ্যমকর্মী এবং সমাজের নানান শ্রেণি পেশার মানুষ।
শিশির মনির মেধাবৃত্তি শাল্লার ১৫ টি স্কুল ও ২ টি মাদ্রাসার সপ্তম-দশম শ্রেণির যাদের রোল ১-৩ পর্যন্ত এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর ২৬ হাজার টাকা করে বছরে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা মেধাবৃত্তি দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে সম্মাননা স্মারক প্রদান শেষে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছে মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়৷ পরে ১০ জন প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরন করেন সচিব জামশেদ আহমেদ ও আইনজীবী শিশির মনির।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, দক্ষিন কোরিয়ার কিংফোক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফ্যাকাল্টি ড. দ্বীন মোহাম্মদ দীপু।
মেধাবৃত্তি অনুষ্ঠান শুভারম্ভে পবিত্র আল কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন আবু হুরায়রা ও পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন প্রজ্ঞা রাণী দাশ।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা