• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নেতিবাচক নহে, ইতিবাচক চিন্তা করিতে হইবে

Daily Jugabheri
প্রকাশিত আগস্ট ২২, ২০২৫
নেতিবাচক নহে, ইতিবাচক চিন্তা করিতে হইবে

আমরা এমন এক যুগে বাস করিতেছি, যাহাতে পরিবর্তন ঘটিতেছে দ্রুত চলমান-চিত্রের বেগে। একদিকে প্রযুক্তির অগ্রগতি, অন্যদিকে যুদ্ধ, অস্থিরতা ও নানাবিধ বিপর্যয়-মানুষ যেন নিত্যদিন নূতন এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়া যাইতেছে। আধুনিক জীবনের এই ঘূর্ণিপাকে মানসিক চাপ মানুষের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হইয়া পড়িয়াছে। ইহা যেন এক নীরব ঘাতক-শরীরকে ভিতর হইতে ক্ষয় করে, মনকে আচ্ছন্ন করে, আত্মাকে ক্লান্ত করিয় ফেলে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে চলমান সংঘাত, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে অনেকেরই মনে হয়-মানুষের জীবন যেন ইহকালেই দোজখের মহড়া দিতেছে।
gnews দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

এত চাপ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দাঁড়াইয়া প্রশ্ন জাগে-এইভাবে কী বাঁচা যায়? সমস্যা অনন্ত, বিপদ ফুরন্ত; ভালো দিনের পর খারাপ দিনের আগমন যেন অবধারিত নিয়ম। তবু দার্শনিকেরা বলিয়াছেন-নেতিবাচক নহে, ইতিবাচকভাবেই চিন্তা করিতে হইবে। তাহা ছাড়া, মানসিক চাপ কেবল ধ্বংসের নহে, সৃষ্টিরও কারণ। ইহা আমাদের জীবনের ঘানির মতো-যাহা আমাদের ভিতর হইতে কর্মশক্তি নিংড়াইয়া আনে। তবে এই চাপের সীমা আছে; সীমা লঙ্ঘিত হইলে বিপর্যয় ঘটে।

আধুনিক জীবন যেন একটি প্রেশার কুকারের মতো-যেখানে অল্প সময়ে কাজ সম্পন্ন হয়; কিন্তু সেফটি ভালভ নষ্ট হইলে বিস্ফোরণ ঘটে। ইতিহাসে বহু মনীষী প্রবল মানসিক চাপে পিষ্ট হইয়াও আত্মনিয়ন্ত্রণে বিজয়ী হইয়াছেন। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল যুদ্ধকালীন দুশ্চিন্তা সম্বন্ধে বলিয়াছিলেন- ‘আমার জীবনের দুশ্চিন্তাগুলির অধিকাংশই কখনো ঘটেই নাই।’ লেবাননের কবি খলিল জিবরান লিখিয়াছেন-‘আমাদের উদ্বেগ ভবিষ্যতের কারণে আসে না: আসে ইহাকে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা হইতে।’ আবার জে কে রাউলিং বলিয়াছেন- ‘কোনো কিছুতে ব্যর্থ না হইয়া বাঁচিয়া থাকা অসম্ভব।’ এই উক্তিগুলির সারমর্ম-ব্যর্থতা ও চাপ জীবনেরই অংশ এবং ইহাদের মূল্যও অপরিসীম।

প্রাচীন শাস্ত্রে আত্ম-উপলব্ধিকে মানসিক শান্তির মূল চাবিকাঠি বলা হইয়াছে। নিজেকে জানা মানে নিজের সীমা ও সামর্থ্য বুঝা; তাহা হইলেই মানসিক চাপের সেফটি ভাল্ভ প্রস্তুত হয়। যিনি নিজের অন্তর্জগৎ অনুধাবন করেন, তিনি জানেন-চাপ আসিবে, আবার চলিয়াও যাইবে; কিন্তু তিনি ভাঙিবেন না। কারণ, আত্মজয় করিলে সকল জয় সম্ভব। আত্মজয়ের এই সাধনা মানুষকে অন্ধকার সময়েও অবিচল রাখে।

টানেলের শেষ প্রান্তে আলো আছে কি না-ইহা লইয়া অনেকেই সংশয়ে থাকেন; কিন্তু সত্য হইল, আমরা ভবিষ্যৎ জানি না; জানেন কেবল সৃষ্টিকর্তা। কারণ, কেহ জানে না কী ঘটিবে। মহান সৃষ্টিকর্তার চাইতে বড় পরিকল্পনাকারী আর কেহ নাই। আমরা যতই কল্পনার প্রাসাদ গড়িয়া তুলি না কেন, ঘটনা কখনো সেই পথে চলে না। অতীতে যেমন ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটিবে না। কোন পথে চলিবে, তাহা কেবল বিধাতা জানেন। সুতরাং টানেলের দৈর্ঘ্য যাহাই হউক না কেন, আলো আসিবেই। প্রশ্ন কেবল এই-আপনি পথ চলিতে ক্লান্ত হইতেছেন কি না, কিংবা ভয় পাইতেছেন কি না। জীবনের অন্ধকার সময়ে এই বিশ্বাসই আশ্রয় যে, পথ যত দীর্ঘই হউক, শেষে আলোর সোপান থাকিবেই।

অতএব, মানসিক চাপকে শত্রু মনে করিলে ইহা আমাদের ভাঙিবে; কিন্তু ইহাকে নিয়ন্ত্রণ করিলে ইহাই আমাদের গড়িবে। জীবনের পরীক্ষায় জয়ী হইবার জন্য চাই আত্মজ্ঞান, ধৈর্য এবং সর্বোপরি নিজের উপর অবিচল বিশ্বাস। আল্লাহ্ প্রদত্ত সেই শক্তি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই নিহিত-আমরা তাহা অনুভব করিব কি না, তাহাই মূল কথা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হইয়াও যদি আমরা আশাহত হই, তাহা হইলে ইহা সর্ববৃহৎ নির্বুদ্ধিতা। এই জন্য নিজের উপর বিশ্বাস রাখিয়া, অবিচল পায়ে চলিয়া যাইতে হইবে। ভুলিলে চলিবে না-অন্ধকার যত গভীরই হউক, আলো তাহার গর্ভেই জন্মে।

সংবাদটি শেয়ার করুন