
কোর্ট রিপোর্টার: সিলেটের বহুল আলোচিত ছাত্রলীগ রনজিৎ গ্রæপের কর্মী মাসুক হত্যাকান্ডের দায়ে এজাহার বর্ণিত ১৫জন আসামীর মধ্যে (১) আলফু মিয়া, (২) সাঈদ আহমদ, (৩) মোঃ মনসুর আহমদ, (৪) জাফর ও (৫) মুহিন আহমদ রাজুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও অতিরিক্ত ০৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এই মামলায় এজাহার বর্ণিত আরও ৮জন আসামীকে ১২ বৎসর করে সশ্রম কারাদন্ড, ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও অতিরিক্ত ০৩ (তিন) মাস করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেছেন। গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর বুধবার) সিলেট মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান এক জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। ১২ বৎসর করে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- (১) আব্দুল আলীম, (২) ফরহাদ, (৩) কয়েছ মিয়া, (৪) আবুল মিয়া, (৫) ছাদ মিয়া, (৬) নোমান আহমদ, (৭) ফারহান আহমদ ও (৮) মঈনুল ইসলাম।
এই মামলায় এজাহার বর্ণিত আসামী রুম্মান আহমদ ও ইব্রাহিম মিয়ার বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আনীত কোন অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় তাদেরকে আদালত নির্দোষ গণ্যে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- (১) আলফু মিয়া, পিতা- মৃত মৌলা মিয়া, সাং মিরাপাড়া, টিলাগড়, (২) সাঈদ আহমদ, পিতা- অজ্ঞাত, সাং শাপলাবাগ, টিলাগড়, (৩) মোঃ মনসুর আহমদ, পিতা- মোঃ সফিক আহমদ, সাং খরাদিপাড়া, রায়নগর, (৪) জাফর, পিতা- মৃত কুতুব উদ্দিন, সাং শিবগঞ্জ, (৫) মুহিন আহমদ রাজু, পিতা- মৃত বাদশা মিয়া, সাং হাতিমবাগ, (৬) আব্দুল আলীম, পিতা- মৃত সারো মিয়া, সাং খাদিমপাড়া, (৭) ফরহাদ, পিতা- মৃত কুতুব উদ্দিন, সাং শাপলাবাগ, (৮) কয়েছ মিয়া, পিতা- মৃত ধন মিয়া, সাং বুরহানবাগ, (৯) আবুল মিয়া, পিতা- মৃত ইমানি, সাং কালাশিল, (১০) ছাদ মিয়া, পিতা- মাহমুদ মিয়া, সাং শাহপরাণ, (১১) নোমান আহমদ, পিতা- কাচা মিয়া, সাং টিলাগড়, (১২) ফারহান আহমদ, পিতা- আব্দুল ওয়াদুদ, সাং টিলাগড় ও (১৩) মঈনুল ইসলাম, পিতা- মৃত ধন মিয়া, সাং শিবগঞ্জ। তন্মধ্যে এজাহার বর্ণিত ৩নং আসামী মোঃ মনসুর আহমদ, ৮নং আসামী কয়েছ মিয়া ও ১৫নং আসামী ইব্রাহিম মিয়া ঘটনার পর হইতে পলাতক আছে। সাজাপ্রাপ্ত ও আদালতের ডকে হাজির আসামীদের পূর্ব জামিন বাতিল করে সাজা ভোগ করার জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে মাননীয় আদালত থেকে সাজাসহ গ্রেফতারী পরোয়ানা ইসু্যু করতঃ তাদেরকে দ্রæত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সুপার, র্যাব-৯কে নির্দেশ প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরী এবং আসামীপক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট শাহীনুল ইসলাম, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন দিলু ও এডভোকেট হোসেন আহমদ এবং পলাতক আসামীপক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ নোমানুর রহমান চৌধুরী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বিগত ২০২১ ইংরেজী সনের ৫ ফেব্রæয়ারি বিকেলে স্থানীয় টিলাগড় পয়েন্টে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রঞ্জিত সরকার গ্রæপের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ কর্তৃক দেশ পরিচালনায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে রনজিৎ গ্রæপের কর্মী মাসুককে এলোপাতাড়ি আক্রমণ করলে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুক মৃত্যুবরণ করলে এই ঘটনায় আওয়াশী লীগ নেতা রনজিৎ সরকার বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৫জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের নামে স্থানীয় শাহপরাণ (রহ.) থানায় একটি হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানী ও স্বাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গতকাল এক জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।