কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টায় উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নের লামাপারকুল গ্রামের মৃত দেবেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে নারদ বিশ্বাসের বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লামাপারকুল গ্রামের বিশিষ্ট পাথর ব্যাবসায়ী নারদ বিশ্বাস বর্তমানে একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। বাড়িতে শুধু তার স্ত্রী সন্ধ্যা বিশ্বাস বসবাস করতেন। গত বুধবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইছাকলস ইউনিয়ন শাখার সভাপতি সাঈদ আহমদের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত নারদ বিশ্বাসের বসতভিটায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। প্রাণভয়ে আতঙ্কিত হয়ে সন্ধ্যা বিশ্বাস বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় হামলাকারীরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৩ হাজার টাকা লুট করে। ভাঙচুরের শব্দে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, নারদ বিশ্বাস একজন অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় লোক। তিনি কোনো ধরণের রাজনীতির সাথে যুক্ত নন। পাথর ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। হামলাকারী সাঈদের পরিবারের লোকজনই নারদ বিশ্বাসের কারাবরণের পেছনে দায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লামাপারকুল গ্রামের এক যুবক জানান, ৪ বছর আগে স্থানীয় পারকুল বাজারে নারদ বিশ্বাসের ছেলে সন্তোষ বিশ্বাসের সাথে ইছাকলস ইউনিয়ন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাঈদ আহমদের একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাকবিত-া হয়েছিল। এ নিয়ে সন্তোষের উপর চরম ক্ষিপ্ত ছিলেন সাঈদ। তাছাড়া সাঈদ ও সন্তোষের মধ্যে পারিবারিক বিরোধও ছিলো। এজন্যই সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তার বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে ছাত্রশিবির নেতা সাঈদ সেই পুরোনো ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সন্ধ্যা বিশ্বাস বলেন, আমি খুবই আতঙ্কে আছি। আমার বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। আমার স্বামী কারাগারে, একমাত্র ছেলে ফ্রান্স প্রবাসী। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। একাই বাড়িতে থাকি। আমি বর্তমানে চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইছাকলস ইউনিয়ন শাখার সভাপতি সাঈদ আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদিউজ্জামান বলেন, লামাপারকুল গ্রামে একটি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে থানায় কোনো পুলিশ নেই। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে আশ্বাস দিচ্ছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের সরকার পতনের একদফা দাবির প্রেক্ষিতে তীব্র আন্দোলনের মুখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সরকারি অফিস আদালতেও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। ৫ আগস্ট থেকে গত ৩ দিনে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এখনও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। সিলেটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে সকল নথিপত্র। কোনো থানায় নেই পুলিশ। রাস্তায় নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশও। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। থানা পাহারা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্থানীয় সময় দুপুরে প্যারিস থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিমানযোগে যাত্রা করেছেন ড. ইউনুস। দেশে ফিরে আজ রাত ৮টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।