• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কে টাকা পাচার করে, তা আমি জানব কীভাবে : অর্থমন্ত্রী

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২৮, ২০২১
কে টাকা পাচার করে, তা আমি জানব কীভাবে : অর্থমন্ত্রী

যুগভেরী ডেস্ক
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের কারা জড়িত তার তালিকা বিরোধী দলের কাছে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছেন, তিনি যেহেতু নিজে টাকা পাচার করেন না, তাই কারা টাকা পাচার করে তা তিনি বলতে পারবেন না।
শনিবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার মধ্যে শুরুতে নীরব থাকায় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারা বিদেশে টাকা পাচার করে তা তিনি জানেন না। কারা টাকা পাচারকারী জানা থাকলে বিরোধী দলের সদস্যরা তাদের তালিকা তাকে দিতে পারেন।
‘ব্যাংকার সাক্ষ্য বহি বিল-২০২১’ পাশের প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এসব বিষয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর জবাব চান এবং একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি তুলেন।
জুন মাসে সম্পূরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারে কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
শনিবার টাকা পাচার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “অনেকভাবে বলেছেন, এই সংসদেও বলেছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের বলেছি, যারা পাচার করে তাদের তালিকা আমাকে দেন।
“আমিতো পাচার করি না। আমি বিশ্বাস করি আপনারাও পাচার করে না। সুতরাং পাচার কে করে, আমি জানব কেমন করে, যদি আপনারা না দেন।”
এ সময় বিরোধী দলের সদস্যদের অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে কিছু বলতে দেখা যায়। তবে তাদের মাইক বন্ধ থাকায় বক্তব্য শোনা যায়নি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সব জবাব দেবেন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মনের মত করে আপনারা প্রশ্ন করবেন। আমি প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাব দেব।”
খেলাপি ঋণের পরিমান স্বাধীনতার এখন সবচেয়ে কম বলে অর্থমন্ত্রী দাবি করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল মোট ঋণের ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এখন এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
এর আগে বিলটি জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার বেশি। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদ, আমলাসহ অনেকে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
টাকা পাচার হয় কি না, হলে কারা করে এটা বের করতে তিনি ব্যাংক কমশিন গঠন করে তদন্ত করার দাবি জানান।
বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, “অর্থমন্ত্রীকে আমরা অনেক প্রশ্ন করি, তিনি কোনো উত্তর দেন না। ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে যান। ই-কমার্সের নামে লুটপাট হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“অথর্মন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। তাহলে কে দায় নেবে?”
বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, “রাঘব বোয়ায়লরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মেরে দিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করছে। গরিব মানুষ ঋণ পায় না। কৃষকদের অল্প টাকা ঋণ খেলাপি বারবার তার বাড়িতে যাওয়া হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “অর্থমন্ত্রী দক্ষ, জ্ঞান রাখেন, সহনশীল, সব কিছু করেন। কিন্তু ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতি, পাচার হলে কত টাকা পাচার হয়েছে এসব বিষয়ে জানানো উচিত।”
চুন্নুর মত তিনিও একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানান। এসব বক্তব্যের অর্থমন্ত্রী কোনো জবাব দেননি।
বিরোধী সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে উঠে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিলটি স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে এটি পরীক্ষা করেছে। তাই তিনি যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, “কাগজে কালমে মন্দ ঋণ এক লাখ কোটি টাকার মত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা ঋণ হিসাব করলে সেটা আসলে মোট চার সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।
“রাজনীতিবিদ, আমলারা টাকা পাচার করেন, এমন শোনা যায়। কারা কত পাচার করে অর্থমন্ত্রী যদি পরিষ্কার চিত্র দেন তাহলে রাজনীতিবিদ ও সৎ আমলারা, মুক্ত থাকতে পারেন।”
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, “অর্থমন্ত্রী যদি মাঝে মধ্যে খুলে বলেন, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা হলে মানুষ জানতে পারে। না হলে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়।
“বিদেশে টাকা পাচার হয়, কী ব্যবস্থা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী যদি বলেন, তাহলে মানুষ একটু শান্তি পায়।”
পরে সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুখ খোলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন