নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেট নগরের এয়ারপোর্ট থানার পাঠানটুলাস্থ নিজ ভাড়াটে কক্ষে এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার (১০ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে পাঠানটুলার পার্কভিউ আবাসিক এলাকার নেহার মঞ্জিলের মোহনা ১০৯ নং বাসার কক্ষে এ খুনের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে স্থানীয় পুলিশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের নাম আব্দুল্লাহ আল কাশীর অন্তর(৩৫)। তিনি নগরের রিকাবী বাজারস্থ আনোয়ারা রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রায় ৮/৯ মাস হলো স্ত্রী ও ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় উঠেছেন। তার স্ত্রী মোছা. শিউলী খানম (৩২) সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবিকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে রবিবার (১০ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে বাসার মালিক সুলতান্ আহমেদ সানি (৩৫)’র নেতৃত্বে ২০/২৫ জন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে অন্তরের বাসায় প্রবেশ করে। এসময় দরজায় টোকা দিতেই অন্তর ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের এলোপাতাড়ী আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে অন্তর। এরপর দুর্বৃত্তরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে অস্ত্র উঁচিয়ে দম্ভ করতে করতে ফিরে যায়।
এরপর স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় অন্তরকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তারা বলেন, ঘটনার সময় আব্দুল্লাহ আল কাশীর অন্তর বাসায় একা ছিল। তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদের আগেই দেশে চলে যান। তবে, ঘটনার সময় অন্তরকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসতে পারেননি বলে নিজেদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন।
ভারাক্রান্ত স্থানীয়রা জানান, দুর্বৃত্তদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে কেউ আগাইনি। দুর্বৃত্তরা খুব নির্মমভাবে অন্তরকে খুন করেছে।
দুর্বৃত্তদের কাউকে চিনতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ঘটনার নেতৃত্বে ছিল সিলেট কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত মিরাবাজারস্থ চন্দনিটুলার উদ্দীপন ২৪/৪ এর বাসিন্দা মৃত আব্দুস শুকুরের পুত্র সুলতান্ আহমেদ সানি (৩৫)। তিনি মোহনা ১০৯ নং বাসার মালিক বলেও তারা নিশ্চিত করেন।
সানির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এসমপির জালালাবাদ থানার আখালিয়া কালীবাড়ি এলাকার জমসেদ আলীর পুত্র বাবুল আহমদ(২৮), সন্ত্রাসী সুয়িম(২৮), সাগর দেবনাথ (২৭) ও গনেশ দেব-এর পুত্র সাগর দেব(২৯)। এছাড়া বাকী সন্ত্রাসীদের তারা শনাক্ত করতে পারেননি।
অন্তরের স্ত্রী মোছা. শিউলী খানম জানান, ‘ঈদের দুইদিন আগে বাসার মালিক সুলতান্ আহমেদ সানি তার সহযোগী গনেশ দেব-এর পুত্র সাগর দেব, বাবুল ও সুয়িম-সহ আরও কয়েক যুবককে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে এবং বাসা ছেড়ে দিতে বলে। তার কথায় প্রতিবাদ করেন আমার স্বামী অন্তর। হঠাৎ বাসা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয় এবং বাসা ছাড়তে আগে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি দাবি করেন। এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে প্রতিবেশী আজিজ খান সজিবসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সমাধান করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ঝগড়া মিমাংসার আগেই তারা আমার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন করে।’
আর্তনাদের স্বরে শিউলী বলেন, ‘সেই ঝগড়ার জের ধরেই আমার স্বামীকে খুন করা হইছে। আমি আমার স্বামী হত্যর বিচার চাই। যারা আমার দুই সন্তানকে এতিম করেছে, তাদের বিচারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।’
শিউলি খানম জানান, তিনি প্রতিবেশীদের দ্বারা সংবাদ পেয়ে সোমবার (১১ জুলাই) সিলেটে ফেরেন। ওমেক হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অন্তরের গলায় ও দেহের বিভিন্ন স্থানে ধারালো কাটার দাগ দৃশ্যমান ছিল। পরে ময়না তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করলে তিনি দাফনের ব্যবস্থা করেন। ওইদিনই তিনি এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গৌসুল হোসেন জানান, রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল কালবী অন্তরকে খুব নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। তার গলা ও দেহের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের স্টেপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার স্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অন্তরের স্ত্রী শিউলী বাদী হয়ে ১০৯ নং বাসার মালিক সুলতান্ আহমেদ সানি (৩৫), তার সহযোগী জালালাবাদ থানার আখালিয়া কালীবাড়ি এলাকার জমসেদ আলীর পুত্র বাবুল আহমদ(২৮), সন্ত্রাসী সুয়িম(২৮), সাগর দেবনাথ (২৭) ও গনেশ দেব-এর পুত্র সাগর দেব(২৯)কে এজাহার নামীয় উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে ১২(১১/০৭/২০১৬) একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশী তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।