• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দলীয় মনোনয়ন পেতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা !

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২০
দলীয় মনোনয়ন পেতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা !

বিন্দু তালুকদার, সুনামগঞ্জ :::
হাওরভাটির জনপদ রাজনীতি সচেতন নির্বাচনী এলাকা দিরাই। এই উপজেলার পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর তদবির-লবিং শুরু করেছেন। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্রসহ ৯ জন মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উল্লাহ, পৌরসভা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক বর্তমান পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাবেক ভিপি বিশ্বজিৎ রায়।
মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাইয়ুম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক ও পৌর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরী। দিরাই পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা মেয়র আহমদ মিয়া। জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী অনন্ত মল্লিক ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা রশিদ মিয়া। তবে জামায়াতে ইসলাম ও জমিয়তে উলাময়ে ইসলাম দলীয় ও কৌশলগতভাবেও মেয়র পদে কোন প্রার্থী দিবেন না বলে জানা গেছে।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা চলছে বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়াকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া আলোচিত তিন খুনের মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী থাকায় মনোনয়ন নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন। খুনের মামলায় তালিকাভুক্ত আসামী হয়ে পলাতক থাকায় তিনি এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যদিও তিনি দলের মনোনয়নের জন্য জোর চেষ্টা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উল্লাহ ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র বিশ্বজিৎ রায়। এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন।
তবে পৌরসভার প্যানেল মেয়র বিশ্বজিৎ রায়ের দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ নানা চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। ওই পক্ষটি নানা জায়গায় অভিযোগ করে বলছেন,‘বিশ্বজিৎ রায়কে পৌরসভার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদান করলে নৌকা প্রতীক পারিবারিক হয়ে যাবে; কারণ উপজেলা নির্বাচনে তার আপন বড় ভাই প্রদীপ রায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন।’
স্থানীয় একাধিক ভোটারের মন্তব্য আওয়ামী লীগে বিভক্তি ও কয়েকজন নেতার বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য দিরাই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভকারীকে ভোটযুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জের মূখে পড়তে হবে। নৌকা বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা গোপনে বিরোধিতা করতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার কর্মকান্ডে সাধারণ কর্মীরাও বিরক্ত।
এদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাউয়ুম ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরী জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা যুবদলের সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, দিরাই-শাল্লার প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবদ্দশায় গত পৌর নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন পৌর মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় প্রার্থী হন মোশাররফ মিয়া। অভিযোগ আছে, মোশাররফ মিয়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নানা বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রাহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন তিনি। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মোশাররফ মিয়ার দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এরপর আলোচিত তিন খুনের মামলায় আসামী হয়ে বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া আদালতের পরোয়ানা নিয়ে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন সাবেক দুই ছাত্রনেতা আসাদ উল্ল্যাহ ও বিশ্বজিৎ রায়। স্থানীয় ভোটারসহ বিভিন্ন মহলের মন্তব্য; তুলনামূলক ক্লীন ইমেজের অধিকারী আসাদ উল্ল্যাহ ও বিশ্বজিৎ রায়।
দিরাই উপজেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন,‘ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত আমাদের দলের কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি।’
দিরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ বলেন,‘ এখন (মঙ্গলবার সন্ধ্যা) পর্যন্ত তিনজন (আব্দুল কাইয়ুম, মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক ও ইকবাল হোসেন চৌধুরী) প্রার্থীকে নিয়ে কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পৌর ও উপজেলা বিএনপির যৌথ সভা ডাকা হয়েছে।’
দিরাই পৌরসভার বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করে জানান তিনি বাসায় নেই।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার বলেন,‘ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এখনও (মঙ্গলবার) ঠিক করা হয়নি। বর্তমান মেয়র ও বিশ্বজিৎ রায় যোগাযোগ করছেন। আগামীকাল বুধবার দলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় বসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ভাটির হাওরের জনপদ দিরাই উপজেলা সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। উপজেলা সদরের ১৭ টি গ্রাম নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। বর্তমানে ৯টি ওর্য়াডের দিরাই পৌরসভায় লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ১৫৪ জন। ৬.৫ বর্গ মিটার আয়তনের এ পৌরসভায় বর্তমান ভোটার ২১ হাজার ৩৭৯ জন । এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৫৫২ জন ও নারী ভোটার ১০ হাজার ৮২৭ জন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক। এবার দিরাই পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর। মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর।

সংবাদটি শেয়ার করুন