• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ফেঞ্চুগঞ্জে এমপি কয়েছ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশের ফাঁকাগুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ : আহত অর্ধশত

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জানুয়ারি ৫, ২০১৯
ফেঞ্চুগঞ্জে এমপি কয়েছ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশের ফাঁকাগুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ : আহত অর্ধশত

যুগভেরী রিপোর্ট ::
ফেঞ্চুগঞ্জে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলাকালে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্ততঃ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার উপজেলাার সার কারখানা ফুটবল মাঠে বেলা ২ টায় এবং মৌরাপুর চা বাগান এলাকায় বিকেল ৪টায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
জানা গেছে, ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিল গতকাল। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
একই দিন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে উপজেলার কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা শাখা। বিকাল ৩টায় এই সামবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার সার কারখানা মাঠে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন শুরু হয়। বেলা পৌনে ২ টার দিকে সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
এ সময় সার কারখানা মাঠের পাশ দিয়ে ছাত্রদলের একটি বিক্ষোভ মিছিল অতিক্রম করার সময় সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। শ্লোগান শুনে ছাত্রলীগের কয়েক জন কর্মী মিছিলকারীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। ফলে, মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়া ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে অবগত করেন। ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া বা হামলার ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে মিছিল বের করে। মিছিলটি বাজার প্রদক্ষিণ করে উত্তর বাজার হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা খেলার মাঠের কাছে পৌছালে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের একটি টিম মিছিলের গতিরোধ করলে মিছিলকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। বিএনপি, যুবদল ও কর্মীরা এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাস্থল ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মাঠে অবস্থানরত ছাত্রলীগের কর্মীরাও পাল্টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। পরে, বিবদমান পক্ষগুলোতে ছত্রভঙ্গ করতে ২০ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
প্রায় আধা ঘন্টা সংঘর্ষের পর পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরবর্তীতে বিকাল ৪ টার দিকে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী স্থানীয় মৌরাপুর চা বাগানের একটি রাস্তা উদ্বোধন করতে যান। সেখানে মৌরাপুর চা বাগান গেইটের সামনে অবস্থানরত বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় সংসদ সদস্যের প্রটোকলে থাকা পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য গত রাত ১১:৩০ মিনিটে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নন্দ কান্তি দেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ছাত্রলীগের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশে ছাত্রদলের নেতকর্মীরা হামলার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তারা আবারো মৌরাপুর চা বাগান এলাকায় এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর গাড়ী বহরে হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু, পুলিশ তৎপর থাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের ৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে ওসি জানান।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সুফি জানান, ছাত্রদলের পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অন্ততঃ ২০ জন নেতকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাবেদুর রহমান দানাস জানান, ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পূর্ব নির্ধারিত সম্মেলন স্থলে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আকষ্মিক হামলা চালালে ছাত্রলীগের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুত নিচ্ছে বলে বলে জানান দানাস।
গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে যোগাযোগ করা হলে ঘটনাস্থলে শান্তি শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ থানার এসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (এ.এস.আই) কাঞ্চন চন্দ্র দাস জানান, শুক্রবারের ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনি বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন, যাহার ধারা- ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৪৪৭/৪৪৮/৩৪ দন্ডবিধি। মামলার এজাহারে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় ধারণ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস শুকুরের পুত্র আব্দুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, একই গ্রামের ফয়েজ আহমদের পুত্র আদনান মোহাম্মদ রাসেল, নিজামপুর গ্রামের মছব্বির আলীর পুত্র মোঃ আব্দুছ ছত্তার, ডাষ্ট কলোনীর আব্দুর রহিম হাওলাদারের পুত্র আব্দুল আজিজ হাওলাদার, কুতুবপুর গ্রামের ওয়াছির আলীর পুত্র আব্দুল হালিমসহ অর্ধশতাধিক লোককে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান এ.এস.আই কাঞ্চন চন্দ্র দাস।

সংবাদটি শেয়ার করুন