বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব বদিউজ্জামান বড় লস্করের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী কাল । গত বছরের ২৬ অক্টোবর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাঁকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করে বড় ছেলে মরহুম মেজর রওনক আকতারের পাশে সমাহিত করা হয়।
তিনি একাধারে সাবেক ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও একজন লেখক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।
বদিউজ্জামান বড় লস্কর ১৯৪০ সালে পহেলা আগস্ট জন্মগ্রহন করেন। সিলেট নগরীর সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে লস্কর বাড়ি খ্যাত শুভেচ্ছা-১২৮ নং বাসার সিলেট সরকারি পাইলট স্কুলের শিক্ষক জনাব ওয়াছির আলী বড়লস্কর ও তাজ বানু বড় লস্কর এর দ্বিতীয় ছেলে তিনি। ৪ ভাই ও ৫ বোনের সাথে শৈশবকালে বেড়ে উঠেন এই নিলয়ে।
সিলেট সরকারি পাইলট স্কুল থেকে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পাশ করেন। এরপর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ (ইতিহাস) ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়ায় চলাকালীন সময়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে, যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী বদিউজ্জামান বড় লস্কর উত্তাল রাজনীতির ময়দানে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকার কারনে কারাবরন করেন। তাঁর সাথে এসময় কারাগারে যারা ছিলেন তারা হলেন কাজী জাফর আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, রাশেদ খাঁন মেনন, আসমত আলী, হায়দার আকবর রনো, এস এম রেজা, আল মুজাহিদী প্রমুখ।
এরই মধ্যে ১৯৬৭ সালে রমজান মাসে স্কুল শিক্ষক পিতা ওয়াছির আলী বড় লস্কর ইন্তেকাল করেন।
রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে ১৯৭১ সালে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অনেক গুরু দায়িত্ব পালন করেন, তাজ উদ্দিন সাহেবের সাথেও খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল।
দেশ স্বাধীনের পরে যোগ দেন সরকারের প্রশাসনে, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহন করেন।
১৯৯১ সালে রমজান মাসে উনার মমতাময়ী মা ইন্তেকাল করেন।
বদিউজ্জামান বড় লস্কর খুলনার মেয়ে আখতারুন্নেছাকে বিয়ে করেন, তাঁদের ঘর আলোকিত করে আসেন তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আখতারুননেছা কর্মময় জীবনে বিএফ শাহীন স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন।
বড় ছেলে রওনক আকতার বুয়েট থেকে মেকানিক্যালে অনার্স সম্পন্ন করে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে, সেখানে কমিশন লাভ করে মেজর হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৩ সালে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সিয়েরালিওন ও লাইবেরিয়ায় দায়িত্ব পালনের সময় এক মর্মান্তিক বিমানদূর্ঘটনায় শহীদ হন।এ সময় তাঁর সাথে আরো ১৪ জন দেশপ্রেমিক অফিসার শহীদ হন। তাঁদের বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ।
২য় ছেলে রায়হান আকতার ডেপুটি সেক্রেটারি
৩য় ছেলে রাজিব আক্তার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমেরিকাতে বসবাস করছেন।
একমাত্র মেয়ে রিফাত আক্তার ব্যাংকে জব করছেন ও তাঁর স্বামী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি দায়িত্বে আছেন।
বদিউজ্জামান বড় লস্করের ভাই ও বোনেরা ছিলেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল।
বড় ভাই জনাব ওমর ফারুক বড় লস্কর সরকারের ডাক বিভাগে দীর্ঘ চাকুরী করে অবসর গ্রহন করেছেন।
৩য় ভাই বদরুল আক্তার সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন।
৪র্থ ভাই জনাব খয়রুজ্জামান বড় লস্কর(পাবেল স্যার) নগরীর দি এইডেড হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
১ম বোন সালেহা বড় লস্কর ছিলেন শিক্ষিকা। তিনি একজন ভালো লেখিকা হিসেবে সুপরিচিত।
২য় বোন সুরাইয়া বড় লস্কর ইডেন কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন।
৩য় বোন আমেনা বড় লস্কর কিশোরী মোহন হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন ।
৪র্থ বোন বাবলী ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন।
বদিউজ্জামান বড় লস্কর লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর লেখা বইগুলো হল- আলেকজান্ডার বিষয়ক জটিলতা ও অন্যান্য, টমাস আলবা এডিসন, মজলুম একনেতা মজলুম এক জননেতা ও সমসাময়িকরা, বিশ্বমানবের মুক্তি সনদ, উম্মার অবস্থানের দর্পন আল্লাহর ঘর, কালবেলার বীর পুরুষ, মহাপুরুষ ও কাপুরুষ, পীর কল্লা কাটুইন্না ও অন্যান্য, সহজ দ্বীন পরিচিতি, কত রং জানরে যাদু, বাহাদুরের ডিগবাজি , পড়হপবঢ়ঃ ড়ভ মড়ফ, আফ্রোদিতি, বিশ্বমানবের মুক্তি সনদ (তৃতীয় খন্ড),সপ্রসারিত চিকিৎসা বিঙ্গান, লালুদের সৌখিন অপেরা, প্রভাতী পাঠ্যভ্যাসে পূন্যময় বানী নিচয়, রংধনু, বিরুপাক্ষের সোনার কেল্লা, অনিকেতের বায়স্কোপ, আল-কুরআনের সহজ ব্যাখ্যা, দিয়াবল অমনিবাস,দ্বীনের প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয় ভিত্তিক আলাপচারিতা- একটি নকশা, আধ্যাত্মিকতা,অধিকারসাম্য ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা, আশেকানে অনুসরণীয় আত্মতাত্ত্বিক বিধান, বিশ্বমানবের মুক্তি সনদ (প্রথম খন্ড), সার্চ ফর পিস, নামাযের আদব, দিওয়ান ই বড়লস্কর, মন্ত্রী আসবেন সহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।