কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহুল ইসলাম বলেছেন, দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমির ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। করোনাকালীন হাওরাঞ্চলে দ্রুত সময়ে বোরো ধান কর্তন কৃষিতে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। প্রযুক্তির সংমিশ্রন কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
তিনি শুক্রবার ৩০ অক্টোবর নগরীর হোটেল মেট্রো এর কনফারেন্স হলে ‘সিলেট অঞ্চলে বোরো ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, ধানের উৎপাদন বাড়াতে আমাদের হাইলী ভ্যারাইটি ও হাইব্রিড জাতে মনোনিবেশ করতে হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সার ও বীজে ইনসেনটিভ দেয়া হচ্ছে। কৃষি টেকনোলজি কৃষকের কাছে পপুলার করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ডক্টর শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: আসাদুল্লাহ এবং ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ডক্টর কৃষ্ণপদ হালদার।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ডক্টর শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, সিলেট অঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী জাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাহলেই টেকনোলজি সাসটেইনেবল হবে। প্রযুক্তিগত সহায়তা কৃষিবান্ধব এই সরকারের পলিসি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: আসাদুল্লাহ বলেন, দেশে প্রতি হেক্টরে বোরো ধানের গড় ফলন ৪ দশমিক এক তিন টন। অথচ হাওরাঞ্চলে ফলন হয় ৪ দশমিক শুন্য ৫ টন। হাওরে এখনও অনেক কৃষক পুরোনো জাতের বীজ ব্যবহার করেন। বেশি ফলনের জন্য হাইব্রিডের ব্যবহার বাড়ালে বাকি জমিগুলোতে ডাল, পেয়াজ সহ অন্যান্য ফসল আবাদ সম্ভব হবে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ডক্টর কৃষ্ণপদ হালদার বলেন, কোল্ড ইনজুরি থেকে পরিত্রাণ পেতে সর্ট ডিউরেশন জাতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কর্দমাক্ত জমিতে কাজের সুবিধার্থে হালকা ধরনের কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর বলেন, ঠান্ডা সহিষ্ণু জাত উন্নয়ন বিষয়ে কাজ চলছে। হাওরের ফসল যাতে ২০ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তোলা যায় সেবিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় হবিগঞ্জ এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর মোস্তফা কামাল এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মজুমদার মো: ইলিয়াস। সভায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে জানানো হয়, সিলেট অঞ্চলে কৃষিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- অপর্যাপ্ত সেচ কাঠামো, অম্লীয় মাটি, শুস্ক মৌসুমে ভু উপরিস্থ পানির সেচ ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা, মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি, শ্রমিক সংকট এবং হাওরে এলোপাথারি রাস্তাঘাট তৈরি। এসব থেকে উত্তরনে সুরমা কুশিয়ারা নদী সহ ভু-উপরিস্থ পানির উৎসস্থল থেকে ফসলের মাঠ পর্যন্ত সেচ অবকাঠামো নির্মাণ, পানি সংরক্ষনাগার তৈরি, প্রবাসী জমির মালিকদের জমি চাষাবাদে সহযোগিতা করা এবং সুষ্ঠু বিপনন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আয়োজনে এই কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চার জেলার উপপরিচালক, উপজেলা কৃষি অফিসার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সহ কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।