• ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সাড়ে ৭ মাস পর মাধবকুণ্ডে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২, ২০২০
সাড়ে ৭ মাস পর মাধবকুণ্ডে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য
লিটন শরীফ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::
দীর্ঘদিন পর মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রকৃতির জলকন্যার সান্নিধ্য উপভোগ ও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে বুক ভরে নিশ^াস নিতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন মাধবকুণ্ডে। করোনা সংকটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ মাস বন্ধ থাকার পর (০১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মাধবকুণ্ড।
করোনা পরিস্থিতির কারণে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বন্ধ ঘোষণা করায় পর্যটনকেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েন। জলপ্রপাত খুলে দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। প্রথম দিনেই দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি কাটাতে অনেক পর্যটক মাধবকুণ্ড বেড়াতে গেছেন। মাধবকুণ্ড যেতে পেরে পর্যটকরা ভীষণ খুশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা সেখানে যাচ্ছেন।
ঢাকার শাখারীবাজার থেকে পরিবার নিয়ে প্রথম মাধবকুণ্ড ঘুরতে গেছেন জনি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়া হবে এটা জানতাম না। আমরা অন্য জায়গা ঘুরে এখানে এসেছি। খোলা পাওয়া গেলে ঘুরে দেখব এ উদ্দেশ্যে। দেখলাম খুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সকলে অনেক খুশি এখানে আসতে পেরে। সবাই আনন্দ করছে।’
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর জুড়ে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকত। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অবকাশ পেলেই ছুটে আসেন মাধবকুণ্ডে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে সেখানে একটু বেশি পর্যটকের সমাঘম ঘটে। পর্যটকের পদভারে তখন মুখর হয়ে ওঠে জলপ্রপাত ও আশপাশ এলাকা। এতে বেচাকেনা বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় ১৯ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাধবকুণ্ডের গেট বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
রোববার (১ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৭ মাস পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় প্রাণ ফিরেছে মাধবকুণ্ডের প্রকৃতিতে। নির্জন পাহাড়ি ঝরনার আশপাশে ফিরেছে বুনো আবহ। পর্যটকদের হেঁটে চলার পথে জমে ওঠেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলছে বুনো ঘাসলতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। দীর্ঘদিন পর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে প্রকৃতির নতুন রূপ, ঝর্ণার শব্দের সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি ও পর্যটকদের উচ্ছ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়েছে। পর্যটকদের কেউ কেউ জলপ্রাপাতের জলে নেমে শরীর ভিজিয়েছেন। হাঁটু সমান জলের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আবার অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে প্রিয়জনদের সাথে ছবি তুলেছেন।
মাধকুণ্ডে আসা পর্যটকদের ছবি তুলে দিয়ে রোজগার করতেন জুয়েল আহমদ। করোনার কারণে জলপ্রপাতা বন্ধ ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েন। খুলে দেওয়ায় তার মনে অনেক আনন্দ। জুয়েল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছি। মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন ছবি তুলে রোজগার করতে পারব। প্রথমদিন হওয়ায় মানুষ কম হয়েছে।’
মাধবকুণ্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যটকদের জন্য কাজ করি। যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। সে জন্য একটি দল সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখে।’
পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ভানু লাল রায় বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা মাধবকুণ্ড ঘুরছেন। প্রথম দিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো পর্যটক এসেছেন। তবে কয়েকদিন গেলে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা কাজ করছি। যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।’
সংবাদটি শেয়ার করুন