• ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিসিকের পুকুর নিয়ে পুকুরচুরি !

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ৫, ২০২০
সিসিকের পুকুর নিয়ে পুকুরচুরি !

যুগভেরী রিপোর্ট :::
একে আসলে কী বলা যায়? পুকুর রক্ষার জন্য কোটি টাকা ব্যয় তার পর আবার টাকা খরচ করে সেই পুকুরটিকে ভরাট করে ফেলার ঘটনাকে অনেকে বলছেন অন্যভাবে ‘পুকুর চুরি।’ আর এই কা-টি ঘটিয়েছে খোদ সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

২০১৮ সালে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরের চারপাশে নির্মাণ করা হয় গার্ডওয়াল ও রেলিং। এরপর চলতি বছরের শুরুতে আবার পুকুরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্যোগের শুরুতে এসকেভেটর দিয়ে খননও করা হয়। অথচ গতমাসে এসে পুকুরটি একেবারে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে- ভরাট করতে চাইলে সরকারের প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে সংস্কার কেনো?

আবার পুকুরসহ জলাধার ভরাটে আইনী নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। অথচ সিলেটের রায়নগর এলাকার এই পুকুরটি ভরাট করেছে খোদ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নগরের জলাধার রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি! ভরাট করে দেওয়া পুকুরটি সিলেট নগরের ১৯ নং ওয়ার্ডের রায়নগর সোনারপাড়া মসজিদের পুকুর নামে পরিচিত ছিলো।
পুকুর ভরাট করা নিয়ে সিসিকের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। স্থানীয় কাউন্সিলর বলছেন, পুকুর খননকালে আশপাশের স্থাপনায় ফাটল দেখা দেওয়ায় পুকুরটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা বলছে, সোনারপাড়া মসজিদ কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে পুকুরটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। পুকুরের জায়গায় মার্কেট তুলতে চায় মসজিদ কমিটি।

সরকারী বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাধার ভরাট করা আইনত নিষিদ্ধ জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, পুকুর-দিঘীর রক্ষার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তারা কোনো পুকুর ভরাট করতে পারে না। এটা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুর ভরাট আরও বড় অপরাধ। আর মসজিদ কমিটি যদি পুকুরটি ভরাট করতে চায় তাহলে দুই বছর আগে যখন প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হলো তখন কেনো তারা এ কথা জানালো না। সরকারি অর্থের অপচয়ের পর কেনো ভরাটের আবদার?

সোনারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ফেলে পুরো ভরাট করে ফেলা হয়েছে পুকুরটি। মাসখানেক আগেও পানি ছিল যে পুকুরে, এটি এখন হয়ে গেছে খেলার মাঠ। পুকুর ভরাট করে ফেলা হলেও চারপাশে সিটি করপোরেশনের নির্মাণ করা গার্ডওয়াল ও রেলিং এখনও রয়ে গেছে।

সিসিক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই পুকুর সংস্কারের জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করে সিলেট সিটি করপোরেশন। ওই সময় মসজিদ পুকুরের গার্ড ওয়াল, এসএস রেলিং ও পুকুরের চারপাশে মাটি ভরাট কাজ করানো হয়। সংস্কারের দুই বছরের মাথায় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ফের খনন করতে গেলে ভেঙে পড়ে আরসিসি গার্ডওয়াল ও পুকুর পাড়ের সড়ক। এই পুকুরের আশপাশের বহুতল ভবনেও ফাটল দেখা দেয়। তখন অভিযোগ উঠে সিসিকের নিয়োগকৃত ঠিকাদারর উপর। সিসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারও তখন এর জন্য ঠিকাদারকে দায়ী করেন।

মাসখানেক আগে মসজিদ কমিটির লোকজনসহ এলাকাবাসী পুকুরটি ভরাট করার জন্য সিসিকের মেয়র বরাবর আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুকুরটি ভরাট করে দেয় সিসিক।

এরআগে সিসিক মেয়র, সিসিকের প্রকৌশলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী, গণপূর্তের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি টিম বেশ কয়েকবার এই জায়গা পরিদর্শন করেন। তখন প্রকৌশলীরা জনস্বার্থে পুকুরটি ভরাটের সিদ্ধান্ত দেন।
সিসিকের এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের কারণে সরকারি অর্থের অপব্যবহারে পাশাপাশি জনগণের সম্পদেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে একটি শহরে পুকুর প্রয়োজন। তাই পুকুর ভরাট করা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে সিলেট নগরীর অধিকাংশ পুকুরই ভরাট করে ভূমিখেকােরা দখল করে ফেলেছে। এখন যদি সিসিকের মত দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে পুকুর ভরাট করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা দুঃখজনক। তাছাড়া আমি মনে করি পুকুরের পাশের ভবনগুলো নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। নিয়ম মানলে পুকুর থেকে পুকুর থেকে ভবনের একটি নিদিষ্ট দূরত্ব থাকতো।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতেই এই পুকুর সংস্কার করা হয়েছিল। এখন তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে।

তবে নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ বলেন, চলতি বছর পুকুর খননের সময় পুকুরের পূব ও উত্তর দিকের আরসিসি গার্ডওয়াল ও পুকুর পাড়ের সড়ক ভেঙে পরে। অনেকগুলো বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দেয়। তাই সিসিকের মেয়রসহ বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী এখানে এসে পরিদর্শন করে পুকুরটি ভরাট করার মতামত দেন। কারণ পুকুর খননের কারণে ভবনে যে ফাটল দেখা দিয়েছে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এই ভবনগুলো ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে। তখন মসজিদ কমিটিসহ এলাকাবাসী পুকুরটি ভরাটের জন্য সিসিকের মেয়র বরাবর আবেদন করেন।

তিনি বলেন, আমরা জানি পুকুর ভরাট করা আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু মানুষের প্রাণের চেয়েতো পুকুর বড় না। তাই জনস্বার্থে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন