যুগভেরী ডেস্ক ::::
চিকিৎসার নামে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই আসামিরা হলেন- মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫), কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির (২৩), কিচেন শেফ মো. মাসুদ (৩৭), ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান (১৮), ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন (১৯), তানিফ মোল্লা (২০), সঞ্জীব চৌধুরী (২০), অসীম চন্দ্র পাল (২৪), লিটন আহাম্মদ (১৮) ও সাইফুল ইসলাম পলাশ (৩৫)।
দুপুরে আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক ফারুক মোল্লা। অপরদিকে রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে তাদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, চিকিৎসক কখনো রোগী মারার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করেন না। শারীরক দুর্বলতাসহ অসুস্থ থাকার কারণে তিনি মারা গেছেন।
অপরপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হীরণ বলেন, “সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। এই কথিত হাসপাতালের কোনো লাইসেন্স নেই। ওয়ার্ডবয়, অভ্যর্থনাকারীরাই সেখানে ডাক্তার হিসাবে কাজ করত। চিকিৎসার নামে তারা আনিসুলকে নির্যাতন করায় তিনি মারা যান। সুতরাং তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ডে পাঠানো হোক।”
বরিশাল মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমের (৩৫) বাড়ি গাজীপুরে। বরিশাল থেকে সোমবারই গাজীপুরের বাসায় গিয়েছিলেন আনিসুল। ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ থাকায় চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয়েছিল আদাবরের ওই হাসপাতালে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সোমবার সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই আনিসুলকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আনিসুলকে সেখানে নেওয়ার পর প্রথমে তাকে নাস্তা খেতে দেওয়া হয়।
“কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় তাকে দোতলায় নিয়ে যান। তার বোন উম্মে সালমা সেখানে যেতে চাইলে তাকে বাধা দিয়ে গেট আটকে দেওয়া হয়।
“আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে আনিসুল করিমের বোনকে দোতালায় নিয়ে যান। সেখানে আনিসুল করিমকে একটি রুমের ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় শোয়া দেখতে পান তার বোন। দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা আনিসুলকে মৃত ঘোষণা করেন।”
উপকমিশনার হারুন বলেন, সেখানে আসলে কী ঘটেছিল তা জানতে তারা হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছেন।
“দেখা গেছে কয়েকজন মিলে মারতে মারতে আনিসুল করিমকে হাসপাতালের দোতলার একটি রুমে ঢোকায়। সেখানে তাকে মেঝেতে উপুড় করে শুইয়ে ফেলা হয় এবং তিন-চারজন পিঠের উপর হাঁটু দিয়ে চেপে বসে। কয়েকজন তার হাত ওড়না দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে।
আনিসুল করিমআনিসুল করিম“কয়েকজন আসামি কনুই দিয়ে তার ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করে। একজন মাথার উপরে চেপে বসে এবং সকলে মিলে পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।”
এ ঘটনায় আনিসুলের বাবা ফাইজ্জুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালটির ১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মধ্যে এই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। বরিশালের আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ, র্যাব ও পুলিশ সদরদপ্তরেও কাজ করেছেন।