• ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কমলা ফুলির ঘর এ বছরও শূণ্য

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ১১, ২০২০
কমলা ফুলির ঘর এ বছরও শূণ্য

বাগান গুলোতে নেই জলঢুপী কমলা, হতাশ চাষিরা!

সামিয়ান হাসান, বিয়ানীবাজার:

“কোথায় থাকো কমলাফুলি সিলেট আমার ঘর / টিয়ে বলে দেখতে যাবো পাখায় দিয়ে ভর।”কিন্তু কবিতার টিয়ের কমলা দেখার আসা পুরন হলোনা এবছরও। কারন কমলাফুলির ঘর এবারও কমলা শূণ্য। বেশ কয়েক বছর পর ২০১১ সালে খুব ভালো ফলন হয়েছিল বিয়ানীবাজারের জলঢুপী কমলার। তাই কমলা চাষিদের মনে আশা জেগেছিল আবার বুঝি সুদিন আসবে জলঢুপী কমলার। কিন্তু গত ৯ বছর থেকে ফলন না হয়ায় আবারো হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কমলা চাষিরা। তবে জলঢুপী কমলার সুদিন ফেরাতে উপজেলা কৃষি অফিস চাষিদেরকে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেছে। সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে অরিজিনাল জলঢুপী কমলার চারা সংগ্রহ করে চাষিদের মধ্যে বিতরন করা হচ্ছে। যাতে তারা কমলার বাগান করতে উৎসাহিত হয়।
গতকাল বুধবার বিয়ানীবাজারের বিবিন্ন কমলা বাগান ঘুরে দেখা যায় কয়েকটি বাগান পরে বাকি সব বাগানই প্রায় কমলা শুন্য। তাই কমলার মান উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন একটি প্রকল্প গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ ও পাহাড়িয়াবর অঞ্চলে একসময় বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ হতো। কিন্তু সঠিক পরিচর্চা, পরিকল্পনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে কমে যায় কমলার উৎপাদন। ফলন ভালো না হওয়ায় অনেকে কমলা চাষ ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালের দিকে ফলন ভালো হওয়ায় আবারও কমলার সুদিন ফিরে আসছে ভেবে উৎসাহি হয়ে পূনরায় কমলাচাষে মন দিয়েছিলেন বিয়ানীবাজারের কমলা চাষিরা। কিন্তু পরপর ৯ বছর ফলন ভাল না হয়ায় আবারও হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে পাড়িয়াবহরের কমলা চাষি হামিদ আহমদ বলেন, ‘গত ৯ বছর আগে এ অঞ্চলে কমলার বাম্পার ফলন হয়েছিল তাই অনেক কমলা বিক্রি করেছি। কিন্তু এবছর বাগানে কমলার পরিমান কম হয়েছে। গাছে যে পরিমান কমলা আছে তা বিক্রি দুরের কথা নিজেদের চাহিদাই মিটবেনা বলে মনে হচ্ছে’। অপর কমলাচাষি জাবেদ আহমদ বলেন, ‘গত বছর নিজেরা খেয়ে আত্বীয়স্বজনদের দিয়েও অনেক কমলা বিক্রি করেছি কিন্তু এবছর নিজেরাও বাগানের কমলা খেতে পারিনি। অল্প কয়েকটা গাছে কমলা থাকলেও সেটা ছোট থাকতেই অন্য প্রানী ধংশ করে দিয়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলার সৌখিন কমলাচাষি দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আওয়াল বলেন, ‘জলঢুপের কমলা খুব সু-স্বাধু, এখানে একসময় বাণিজ্যিকভাবে কমলা ও আনারসের চাষ হতো। এখনো এই অঞ্চলে কমলা চাষের সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায় নি, তাই সরকার যদি এই অঞ্চলকে কমলা উৎপাদন অঞ্চল ঘোষনা করে তাহলে হয়তো এ অঞ্চলে আবারোও কমলার সুদিন ফিরে আসবে। স্থানীয় জাতের (জলঢুপি) কমলার উন্নয়নে নতুন করে একটি প্রকল্প গ্রহন করার পাশাপাশি এখনি যদি সঠিক পরিচর্চা, পরিকল্পনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেন তবে জলঢুপি কমলার সুদিন আবারও ফিরে আসবে’।
এছাড়া স্থানীয় জাতের (জলঢুপি) কমলার উন্নয়নে নতুন করে একটি প্রকল্প গ্রহন, সেচের জন্য ফুট পাম্প, বাজারজাত করণ ও কমলা সংরক্ষনের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবী করেছেন স্থানীয় কমলা চাষিরা। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী আনিছুজ্জামান ফলন কম হওয়া ও ফল ঝরে যাওয়া সর্ম্পকে বলেন, ‘বিয়ানীবাজারের কমলা বাগানগুলোতে আন্তপরিচর্যার অভাব রয়েছে। তাছাড়া মাটিতে রসের অভাব হলে এবং ফুল ফোটার সময় টেম্পারেচার বেশী থাকেলে ফুল ও ফল ঝরে যেতে পারে। তাছাড়া বিয়ানীবাজারের কমলা বাগানগুলির বেশিরভাগ মালিক প্রবাসে অবস্থান করায় সঠিক পরিচর্চা হয় না সেজন্য প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন হয় না। আমরা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিয়ানীবাজারে মোট ১৫০ টি কমলা বাগানে ৫০.৫২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয় জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কমলার উন্নয়নের লক্ষে গবেষনা চলছে নতুন একটি প্রকল্পও গ্রহন ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে অরিজনিাল কমলার চারা সংগ্রহ করে চাষিদের মধ্যে বিতরন করা হয়েছে। অনেকে উৎসাহ নিয়ে চারা সংগ্রহ করে নিজেস্ব জমিতে বাগান তৈরী করেছেন। উপজেলার কোনাগ্রাম, ছেটদেশ, লাউতায় এবছর নতুন করে বেশ কয়েকটি জলঢুপী কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। আশা করছি দু-এক বছরের মধ্যে গাছে কমলার ফলন ধরা শুরু হবে। তাছাড়া জলঢুপ অঞ্চলকে কমলা উৎপাদন অঞ্চল ঘোষনার ব্যপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
প্রবিন শিক্ষাবিদ ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারক্ষেষ চন্দ্র নাথ বলেন, একটা সময় বিয়ানীবাজার জলঢুপী কমলার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিচিত ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে এখানে জলঢুপী কমলার ফলন ভালো হচ্ছে না। যার ফলে চাষিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তেমনি বিয়ানীবাজারের মানুষ প্রকৃত জলঢুপী কমলার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, বিয়ানীবাজারের কমলা বাগানের বেশিরভাগ মালিক প্রবাসে থাকেন তাই বাগান গুলোতে সঠিকভাবে পরিচর্চা করা হয় না যার ফলে ধীরে ধীরে গাছে ফল কমে যাচ্ছে। আমি মনে করি কমলার সুদিন ফেরাতে হলে বাগানগুলোতে সঠিক পরিচর্চা করতে হবে এবং সেই সাথে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে সময়ের পরিক্রমায় নতুন প্রজন্মরা জলঢুপী কমলার গল্প শুনবে বাস্তবে স্বাদ নিতে পারবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন