নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলায় পুলিশের সদস্য সংখ্যা ১১৮২জন। এর মধ্যে বিভিন্ন স্পেশাল দায়িত্বে এর একটি অংশ ব্যস্ত থাকায় মাত্র ৮০০ জনকে সরাসরি অভিযানে পায় মৌলভীবাজার পুলিশ। কিন্তু জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। জাতিসংঘের মতে যেখানে ৪০০ জন মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা সেখানে মৌলভীবাজারে ২০ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় ৮০০ পুলিশকে। এই সংখ্যা নিয়ে সারাবছর কাজ করলেও পুলিশকে চ্যালেঞ্জে পড়তে হয় শীত মৌসুমে। এই সময়ে ডাকাতি বেড়ে যায়, মূলত শীতটাই ডাকাতির মৌসুম।
তবে এ বছর ডাকাতি-প্রতিরোধে বিকল্প উপায় বের করেছে মৌলভীবাজার পুলিশ। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদের পরিকল্পনায় “পুলিশ- জনতার যৌথ পাহারা কার্যক্রম” নামে ডাকাতি প্রতিরোধে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান জানান, আমাদের জনবল কম কিন্তু এই অজুহাতে ডাকাতি মেনে নেওয়া যাবেনা। তাই ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ সুপার স্যার সাধারণ জনগণকে পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত করে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন যেন কোনভাবেই মৌলভীবাজারে ডাকাতি না হয়। সেটি হচ্ছে “পুলিশ-জনতা যৌথ পাহারা”
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে এই কার্যক্রম রাতভর ঘুরে দেখেন। এবং পাহারায় থাকা পুলিশ সদস্য ও সাধারণ জনগণকে পুলিশ সুপার উৎসাহ দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু নাসের মোহাম্মদ রিকাবদার, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) পরিমল দেব, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) বদিউজ্জামান। সহ সহ এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার যুবক-প্রবীণরা।
সরেজমিনে মধ্যরাতে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ-জনতা মিলে পাহারা দিচ্ছেন। এই উদ্যোগে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
চাদনীঘাট ইউনিয়নের ছড়াপার এলাকার লিটন মিয়া পাহারারত অবস্থায় জানান, তারা নিয়ম করে পুলিশের সাথে পাহারা দেন। তবে পুলিশ ছাড়াও তারা পাহারা দেন। সমস্যা হলে মোবাইল ফোনে পুলিশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তারা এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে তার তথ্য জানতে চান। সন্দেহ হলে টহল পুলিশকে খবর দিলে তারা সাথে আসেন।
একাটুনা ইউনিয়নের ইসমাইল মিয়া জানান, এই উদ্যোগের কারণে ডাকাতরা ডাকাতি করতে পারবেনা যার কারণে আমরা নিরাপদ আছি বলে মনে করছি।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জানান, জনবল-যানবাহন সংকট দীর্ঘদিনের তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সেই সংকট দিনে দিনে কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে যে সমস্যাই থাকুক আমরা কিন্তু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জনগণের নিরাপত্তা দেব। তাই সাধারণ জনগণকে আমরা পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকাতি প্রতিরোধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যদিও পুলিশের কাজ সবসময় সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সম্পন্ন হয়। তবে যেহেতু ডাকাতিমুক্ত মৌলভীবাজার বাস্তবায়ন আমাদের উদ্দেশ্য এবং শীত মৌসুমে ডাকাতি বেশি হয়। তাই আমরা এই সময়টাকে একটু আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা, এই উদ্যোগের সফলতা সাধারণ মানুষ পাবে এবং ডাকাতিমুক্ত মৌলভীবাজার হবে।