• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারে ঠিকাদারের ভুলে সড়কে ধ্বস, হাতের টানে উঠছে কার্পেটিং!

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২০
বিয়ানীবাজারে ঠিকাদারের ভুলে সড়কে ধ্বস, হাতের টানে উঠছে কার্পেটিং!

সামিয়ান হাসান, বিয়ানীবাজার : বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগীবাজার-তক্তারপুল সড়কের সংস্কার কাজ চলাকালে উঠে যাচ্ছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাধীন রাস্তার কার্পেটিং। সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংস্কারাধীন এই সড়কটির প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার শেষ হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাটলের। তবে এসব অনিয়ম ছাড়াও এ রাস্তায় নতুন করে মরার ওপর খাড়ার গাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন কার্পেটিং করা এই সড়কে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি বড় ট্রাক চলাচল করায় সড়কের একটি অংশ ধ্বসে গেছে।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তায় পিচ ঢালাই দেয়া হয়েছে। ঢালাইয়ের সপ্তাহ খানেকের মাথায় উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী ও দেউলগ্রাম এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তাছাড়া গত বুধবার ভোরবেলা নির্মাণসামগ্রী বহনকারী কয়েকটি বড় ট্রাক চলাচল করায় সড়কের গোবিন্দশ্রী এলাকায় নতুন কার্পেটিং করা একটি অংশ ধসে গেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
তারা জানান, সড়কের নতুন করা কার্পেটিং হাত দিয়েই উঠিয়ে ফেলা যাচ্ছে। রাস্তার কার্পেটিং করার ২৪ ঘন্টা পার হবার আগেই ঠিকাদার ৭ টনের ৬-৭টি মালবাহী ট্রাক এই সড়ক দিয়ে প্রবাশ করান। এতে একটি পাথরবাহী ট্রাক অভারলোড হওয়ায় সড়কের একটি অংশ ধ্বসে গেছে। তাদের অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারণেই রাস্তার এমন চিত্র।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ ফিডার রোডের বিয়ানীবাজার অংশের বৈরাগীবাজার-তক্তারপুল সড়কের প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। সংস্কারাধীন এই রাস্তার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে জহিরুল ইসলাম এন্টারপ্রাইজ।
এদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাস্তার ক্ষতিগ্রস্থ অংশটুকু উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে পুনরায় কাজ করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও সেটা মেনে নেননি স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা সঠিক নিয়মে এবং ভালো মান বজায় রেখে যাতে সংস্কারকাজটি সম্পন্ন করা হয় সেজন্য এলজিইডির উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে দেউলগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রুমন বলেন, প্রথমে কাজটি দেখেই মনে হয় নিম্নমানের কাজ হয়েছে। হাত দিয়ে টান দিলেই পিচের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তাছাড়া অটোরিকশা চলাচল উপযোগী এই সড়ক দিয়ে বড় বড় ট্রাক চলাচল করার কারণে সড়কের একটি অংশ ধ্বসে গেছে। গোবিন্দশ্রী এলাকার যুবক নজমুল ইসলাম বলেন, মুনাফালোভী ঠিকাদারের কারণে সড়কটির এই দশা। তাছাড়া নতুন কার্পেটিং করা এই সড়ক দিয়ে কেনইবা ৭ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক প্রবেশ করানো হবে। আমরা রাস্তাটি যথাযথভাবে পুনরায় সংস্কার ও পিচ ঢালাই করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
সিএনজি অটোরিকশা চালক ময়নুল ইসলাম বলেন, পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবার পরই দেখছি শ্রমিকরা এখানে নিম্নমানের কাজ করছেন। পিচ ঢালাইয়ের পূর্বে রাস্তাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। তাছাড়া ঢালাইয়ে পিচ, পাথর, বিটুমিনসহ যাবতীয় মালামাল ঠিকভাবে না দেওয়ায় পিচ উঠে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি জানান, কাজের অনেক ট্যাকনিক্যাল বিষয় আছে। কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। তবে ঠিকাদারের ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, নতুন কার্পেটিং করা রাস্তা দিয়ে মালবাহী ট্রাক প্রবেশ করানো ঠিক হয়নি। আমি এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাস্তাটি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ অংশটুকু সঠিকভাবে পুনরায় সংস্কার করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন