সামিয়ান হাসান, বিয়ানীবাজার : সিলেটের বিয়ানীবাজারে অর্ধযুগ ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি একটি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। ফলে একদিকে যেমন গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা অন্যদিকে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে অরক্ষিত এবং অবহেলায়। প্রবাসী অধ্যুষিত এই উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর। এ ইউনিয়নটিতে সর্বাধিক মানুষ গবাদিপশু লালন-পালন করে থাকেন। ফলে এলাকার গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য নির্মিত হয়েছিল ‘তিলপাড়া ইউনিয়ন পশু চিকিৎসা কেন্দ্র’। তবে চিকিৎসকের পাশাপশি জনবল সংকটের কারণে এ চিকিৎসা কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে বন্ধ।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে তিলপারা ইউনিয়নের চান্দপাড়া গ্রামে এই পশু চিকিৎসালয়টি স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর এখানে গবাদিপশুর চিকিৎসায় নিয়মিত চিকিৎসক আসলেও গত ৬-৭ বছর ধরে লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে আর কোনো ডাক্তার এখানে যোগদান করেননি। এজন্য স্থানীয়রা এখানে ডাক্তার দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাছাড়া অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি অনেক আগেই চুরি হয়ে গেছে। হাসপাতাল ভবনের দরজা-জানালা জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। বেদখল হয়ে যাচ্ছে ভূমি। প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকায় হাসপাতালের ঘরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটির চারপাশে আঘাছায় ঢেকে গেছে। দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না এটি একটি প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল। হাসপাতালের মাঠে মৌসুমি নানা সবজির চাষ করছেন স্থানীয়রা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কালের সাক্ষী হয়ে কোনোমতে ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। কবে নাগাদ সরকারি প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে ডাক্তার দেওয়া হবে তা কারও জানা নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালটি বন্ধ। এ অবস্থায় গবাদিপশু অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা দিতে পেতে তাদেরকে অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। চিকিৎসার অভাবে এলাকার অনেক গরু-ছাগল মারা গেছে। তিনি হাসপাতালটি চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আসুক আহমদ নামে এলাকার এক যুবক বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটি প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার দূরে। তাছাড়া সরকারি পশু হাসপাতালের ডাক্তারদেরকে কল করেও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে এখানকার স্থানীয়রা বেশি অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট ডাক্তারদের দ্বারস্থ্য হচ্ছেন।
তিলপারা ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, এই ইউনিয়নের মানুষজন কৃষিনির্ভর হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশু লালন-পালন করেন। এই পশু চিকিৎসা কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় গবাদিপশু নিয়ে থানা সদরে অবস্থিত পশু হাসপাতালে যেতে হয় স্থানীয়দের। উপজেলার দায়ীত্বশীল কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার ফলে সরকারি পশু চিকিৎসা কেন্দ্রটি পুনরায় চালু হলে যেমন তিলপাড়া ইউনিয়নবাসী স্বল্পমূল্যে তাদের গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা পাবে, তেমনি সরকারও এখান থেকে রাজস্ব লাভ করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. একেএম মোক্তাদির বিল্লাহ বলেন, লোকবল সংকটে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। তবে এটি চালুর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় বসার কোন পরিবেশ নেই। হাসপাতালটি মেরামত করার পর আপাতত স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন এই পশু চিকিৎসা কেন্দ্রটি চালু করবেন বলে জানান তিনি।