সিলেটের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর অভিযোগ নিস্পত্তি না করেই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিলেট অফিস সংকীর্ণ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে বদলির সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজের দুর্নীতির কারণে তারা আজ সর্বশান্ত বলে অভিযোগ করেছেন।
রোববার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেরদৌসি রহমান। তিনি বলেন, সিলেটে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের নিবন্ধিত ফাস্টলীড, মেট্রোসিটি, জালালাবাদ এবং আইএসসিএল সিকিউরিটিজের প্রতারণার শিকার কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী। তারা বিনিয়োগকারীদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারসাজির মাধ্যমে বিও একাউন্টে থাকা কোটি কোটি টাকার শেয়ার তছরুপ করেছে। প্রতারিতদের আশ্রয়স্থল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সিলেট অফিস। এই অফিস ইনচার্জের কারণে প্রতারিত অনেক বিনিয়োগকারী অভিযোগের সমাধান পেয়েছেন। তবে কয়েক হাজার অভিযোগের সমাধান এখনো হয়নি। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের নীতি নির্ধারকরা সিএসই’র সিলেট অফিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এ সিদ্ধান্ত লুণ্ঠনকারীদের বাঁচিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা বলেই আমাদের ধারণা। আমরা তা প্রতিহতের চেষ্টা করি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক ও বর্তমান চেয়াম্যানের সাথে দেখা করে সিদ্ধান্তটি পরিবর্তনের দাবি জানাই। সেই সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিক আবেদনও করা হয়। সর্বশেষ মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবাদের মুখে তারা এখন একশ’ ফুটের ঘরে দাপ্তরিক কাজ করবেন। সেই সাথে বর্তমান ইনচার্জকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাজার হাজার ভুক্তভোগীর অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন বর্তমানে ইনচার্জ। তিনি অসংখ্য অভিযোগ নিস্পত্তির মাধ্যমে সবার আস্তা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাকে বদলির সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলো নিস্পত্তি না করে সিলেট অফিস বন্ধ বা ইনচার্জকে বদলির বিষয়টি আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। আমাদের ধারণা কুচক্রি মহল অপতৎপরতা চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রণয়নে কাজ করছে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে অভিযুক্ত দুষ্টকৃতিকারীরা রেহাই পেতে পারে এবং তাদের দুর্নীতির পরিধি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে নীতি নির্ধারকদের এমন সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি হবে বলেই আমাদের ধারনা।
তিনি বলেন, সিলেটে বর্তমানে সিএসই’র নিবন্ধিত ৩৪টি সিকিউরিটিজ হাউজ আছে। সেগুলোতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ার লেনদেন করছেন। সিএসই’র বর্তমান সিদ্ধান্ত পুুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সবাই আতঙ্কিত। তাই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারকে সামনে এগিয়ে নিতে সিলেট অফিসকে ঘিরে নেয়া এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রতারণার অভিযোগ দ্রুত নিস্পত্তির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক (শেয়ার হোল্ডার) সিদ্দিকুর রহমানের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করবো।
সিলেট অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা এবং সিকিউরিটিজ হাউজের প্রতারণার প্রতিবাদ স্বরূপ ‘বিনিয়োগকারী স্বার্থ সুরক্ষা’ নামের একটি সংগঠন করতে যাচ্ছি যা খুব কয়েকদিনের মধ্যেই আত্ম প্রকাশ করবে। আমাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে আরো বড় আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবেন বলেও কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছেন সিলেটের বিনিয়োগকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো. মশিউল আলম, মো. আনোয়ার হোসেন, আস্কার বাছিত, মো. তৈয়বুর রহমান, সাদিক আহমদ, মো. নূরুল ইসলাম, দেওয়ান তৌফিক, শাহ নূরুল ইসলাম প্রমুখ। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।