• ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

‘মাদ্রাসা থেকে এসে’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২০
‘মাদ্রাসা থেকে এসে’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

যুগভেরী ডেস্ক :::::
কুষ্টিয়া পৌর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
যে মৌলবাদীরা জাতির পিতার ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি কেউ মনে করেন, তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল।”
আটক চারজন হলেন- কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার ছাত্র আবু বকর ও মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আলামিন ও ইউসুফ আলী।
সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে আবু বকর ও নাহিদকেই ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালাতে দেখা গিয়েছিল বলে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মহিউদ্দিন জানিয়েছেন।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ওই ভাস্কর্যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
পৌর কর্তৃপক্ষ পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে একটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। শুক্রবার রাতের ওই হামলায় ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের আংশিক ভেঙে ফেলা হয়।
স্থানীয় সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সোয়া ২টার পর টুপি মাথায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুইজন পায়ে হেঁটে এসে বাঁশের মই বেয়ে উঠে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর করে।
সে প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গভীর রাতে এসে… দুজনের ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। তারা দুজন হাতুড়ি দিয়ে ভেঙেছে।ৃ তারা ইবনে মাসউদ মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই যে উসকানি দিচ্ছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বের করে নিয়ে আসছে, এটা নিশ্চয় কারো কাম্য নয়। আমরা অবশ্যই এটা দেখব।”
ভাস্কর্য বসালে ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার’ যে হুমকি হেফাজতে ইসলামীর নেতারা দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। আমি ও আমরা যারা শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছি, আমরা এটুকু বলতে পারি- কোনো ধরনের অরাজকতা বাংলাদেশে করতে দেব না। অরাজকতা বলেন, ভাঙচুর বলেন, কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না।”
একটি গোষ্ঠী ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আমি গতকাল ফেইসবুকে দেখেছি, একটা ছোট ছেলে বলছে যে মুক্তিযুদ্ধে কত শহীদ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি রক্ত হেফাজতের তারা দিয়েছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে বিভ্রান্তি, অল্প বয়সের ছেলেদের মাথার মধ্যে দিচ্ছে, এটা তারা জেনেশুনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিচ্ছেন।”
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর সেই তাণ্ডবের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “ওই ঘটনার পর আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম, কয়জন শহীদ হয়েছেন কোন মাদ্রাসার, কোন বাড়ির- তা যেন আমাদের এসে জানায়, আমরা কিন্তু সেই লিস্ট এখনও পাইনি। এটাই হলো বাস্তবতা।”
ভাস্কর্য ভাঙচুরের মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের হুকুমের আসামি করা হবে কিনা- এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “হেফাজতের নেতা হবেন কিনা, কে হবেন সেটা তদন্তের ব্যাপার, তদন্তে যার নাম বেরিয়ে আসবে, তার নামেই মামলা হবে, এটা স্পষ্ট।”
ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেই হেফাজত নেতাদের এই ভাস্কর্যবিরোধী কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসছে কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “সরকার রিভিউ করবে কিনা এটা সরকারের বিষয়। আমাদের বিষয় হল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেব।”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার স্মৃতি ধরে রাখা হবে না, এটা তো বাংলাদেশের কোনো মানুষই মেনে নিতে পারবে না। আপনি যদি ফিরে তাকান মুসলিম সভ্যতার যুগে- আলবেরুনি বলেন, ইবনে বতুতা বলেন, তাদের ভাস্কর্য তো বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে। সেগুলো তো কেউ ভাঙছে না।
“ভাস্কর্য মানে পূজা নয়। তাকে ধরে রাখা, তার যে অবদান দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, সেটাকে হৃদয়ে গেঁথে রাখা। আমরা তো অনেক ইসলামিক দেশে ভাস্কর্য দেখেছি। মুদ্রার মধ্যে সৌদি বাদশাহর ছবি রয়েছে, পাকিস্তানে কায়েদে আজমের ছবি রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি রয়েছে। ওটা আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরছি।”
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “যেখানে একটা ভাস্কর্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাক্ষী হয়ে থাকবে, সেখানে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি। এটা হল মনমানসিকতার ব্যাপার।”
দেশে অন্য যেসব ভাস্কর্য রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এগুলো যারা ভাঙবে তারা তো নিশ্চয় না জেনে মুর্খতার পরিচয় দেবে। নিরাপত্তা আমরা অবশ্যই দেখব।”
সরকার হেফাজতের বিষয়ে নমনীয় কি না- এমন এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারও প্রতি নমনীয় নই। যেটাই আমাদের সামনে আসছে, সেটাই আমরা দেখছি। আমরা জনগণকে নিয়েই চলি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই কাজ করি। কাজেই জনগণ যেটা চায়, সেটাই প্রতিফলিত হবে, সরকার সেটাই করবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন