সাদিকুর রহমান সাকী :::::::
ফুলকপি; নামটা বললেই সবার মনে সাদা রংয়ের ফুলকপির ছবিটাই ভেসে উঠে। কিন্তু এছাড়াও বিভিন্ন রংয়ের যে ফুলকপি হতে পারে সেটা হয়তো অনেকের ধারণার বাইরে। কিন্তু বাস্তবে সাদা রংয়ের পাশাপাশি কমলা, সবুজ এমনকি বেগুনি রঙের ফুলকপিও আছে। যেগুলো সৌখিন বাগানিরা চাষ করে থাকেন। বিশেষ করে যারা ছাদ কৃষি বা আঙিনা কৃষিতে যুক্ত তাদের অনেকের কাছে বিভিন্ন রংয়ের ফুলকপি অনেকটাই পরিচিত। কিন্তু যারা মাঠে সবজি আবাদ করেন তথা একেবারে তৃণমূলের কৃষক তাদের অনেকের কাছে এটি নতুনও হতে পারে। তবে সিলেটের কৃষিতে রঙিন ফুলকপি একেবারে নতুন এটা বলাই যাই। ভিনদেশী ও ভিন্ন রংয়ের এই ফুলকপি সিলেটে আবাদ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি পদক প্রাপ্ত কৃষক সৈয়দুর রহমান। ইতোমধ্যে বেগুনি রংয়ের ফুলকপি মাঠে চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন এই কৃষি উদ্যোক্তা। রঙিন এই ফুলকপি দেখতে এখন তার মাঠে ছুটে যাচ্ছেন নানা পেশার মানুষ। ছুটছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরাও। তবে এটা কোন জাতের কিংবা কোন দেশের কপি তা বলতে পারছেন না কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। অনেকটাই অন্ধকারে রয়ে গেছেন তারা। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালাহ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। অনেক কৃষিবিদের কাছে এই বেগুনি ফুলকপির ছবি পাঠিয়ে তথ্য জানতে চাইলে তারাও কিছু জানাতে পারেননি। যিনি এটির চাষ করেছেন তারও তেমন একটা আইডিয়া নেই এটা সম্পর্কে। অনলাইনে দেখে চাষে আগ্রহী হয়ে বীজ ঢাকার এক বীজঘর থেকে নিয়ে এসেছেন বলে জানান কৃষক সৈয়দুর রহমান। ঢাকার বীজ আমদানি কারকের ও তেমন কোন ধারণা নেই এই ফুলকপি সম্পর্কে। তারাও এসম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেনি। তাদের মতে, সৌখিন বাগানিদের জন্য এই বীজটা থাইল্যান্ড থেকে আমদানী করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এর বেশি তথ্য মিলেনি আমদানিকারকের কাছ থেকে ।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এই বেগুনি ফুলকপি সম্পর্কে কোন তথ্য না পেয়ে দ্বারস্থ হতে হয় গুগলের। বিভিন্ন নিবন্ধ ঘেটে যেটা পাওয়া যায় তা হলো বেগুনী ফুলকপির ((Purple cauliflower)) অন্য নাম সিসিলিয়ান ভায়োলেট/ভায়োলেট কুইন/গ্র্যাফিটি কলিফ্লাওয়ার। রঙ বেগুনী হলেও এটি কিন্তু হাইব্রিড নয়। ইটালি বা দক্ষিণ আফ্রিকাই এর আদি বাসস্থান। এর বেগুনী রঙ anti-oxidant Anthocyanins-য়ের জন্য। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। রং যা-ই হোক না কেন, স্বাদ প্রায় একই। বেগুনি ফুলকপি শুধু দেখতেই বৈচিত্র্যময় না এর স্বাস্থ্য গুনাগুন সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি। বেগুনি ফুলকপি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রস ব্রিডিংয়ের কোনও “মিউট্যান্ট” নয়। রঙিন ফুলকপি মূলত অ্যান্টোসায়ানিন থেকে তার সুন্দর এবং আকর্ষণীয় রঙ পায়। অ্যান্টোসায়ানিন একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্ল্যাভোনয়েড যা ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রুপের অন্তর্গত যা বেগুনী বাঁধাকপি, বেগুনি গাজর এবং বেগুনি বেরিতেও পাওয়া যায়। এর উপকারিতা হ’ল রক্তনালীর ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং কোলাজেন ধ্বংস প্রতিরোধ করা যা স্বাস্থ্যকর এবং ঝলমলে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রোটিন। বেগুনি ফুলকপিতে সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বিটা ক্যারোটিন ২৫ শতাংশ বেশি থাকে যা ত্বক, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি এবং চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অ্যান্টোসায়ানিনগুলি তাদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে বাতজনিত আর্থাইটিসের মতো কিছু প্রদাহজনক পরিস্থিতি দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
কৃষির নিত্য নতুন জাত ও প্রযুক্তি নিয়ে বরাবরই আগ্রহ মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের মন্দিরখলা গ্রামের কৃষক সৈয়দুর রহমানের। নতুন কোন প্রযুক্তি পেলে সেটাকে সফল করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। তেমনি ভাবে কৃষির নতুন কোন জাত মাঠ প্রদর্শনীতে আগ্রহী তিনি। সেই নেশা থেকেই বেগুনি বা রঙ্গিন ফুলকপি চাষে মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। যা চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন । তিনি বলেন, সাধারণত সাদা ফুলকপিই আমরা দেখি ও খেয়ে থাকি। এটাও অনেকটা সাদা ফুলকপির মতো, তবে স্বাদ অনেকটা সাদা ফুলকপির চেয়ে ভালো। এছাড়া এই সবজি সালাদ, স্যান্ডউইচ এবং অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা যায়। তিনি এবার সফলতা পাওয়ায় আগামিতে বেশি করে আবাদ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তবে বীজ প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা রয়েছে তার। সিলেটে তথা বাংলাদেশে বেগুনি ফুলকপির আবাদ মাঠ পর্যায়ে এতটা হয় না বলে বীজের দামও বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী উচ্চ মুল্যের ফসল কৃষক পর্যায়ে আবাদ বৃদ্ধিতে বীজ প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। সরকার কৃষিতে অনেক ভর্তুকি দিচ্ছে, এ ব্যাপারে ও সংশ্লিষ্টদের মনোযোগি হওয়ার আহবান জানান তিনি।
কৃষক সৈয়দুর রহমানের এই সাফল্য দেখতে মাঠে যাচ্ছেন অনেকেই। সেরকমই একজন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, তিনি বেগুনি ফুলকপি চাষে সৈয়দুর রহমানের সফলতার ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, এই ধরণের কৃষি উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সহযোগিতা করা প্রয়োজন। যাতে করে তারা নিত্য নতুন কাজে উৎসাহিত হয়। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষক সৈয়দুর রহমান যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সেটা দেখে অন্য কৃষকরাও যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সিলেট তথা দেশের কৃষিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।