• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন

সিটি কপোরেশনের ব্যর্থতাকে দোষছেন নগরবাসী
<><> সুবর্ণা হামিদ <><>
সিলেট নগরীতে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। শীত একটু কমার সাথে-সাথে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে জনজীবন। ছোট্ট একটি পতঙ্গ অথচ মানুষকে যে পরিমাণ বিরক্তি আর ভোগান্তিতে ফেলছে প্রতিনিয়ত। গরমের সময় এই ছোট্ট প্রাণীটিকে প্রতিরোধ করার জন্যে বাড়িতে বাড়িতে রীতিমত কামান দাগানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগে আগেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে মশা আসতে না পারে। রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙ্গানো হয় যাতে মশা তার বিরক্তিকর গান শুনাতে না পারে।
মশার কয়েল, স্প্রে, গায়ে মাখার ক্রিমসহ আরো কত ব্যবস্থা নেওয়া হয় মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু তাতেও কমছে না মশার জ্বালাতন। যত সময় যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে মশার যন্ত্রণা। সন্ধ্যার পর আরো ভয়ানক রূপ নেয় মশার মিছিল। দিনেও খুব কম থাকে না মশার উৎপাত। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে সবখানেই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। কিন্তু এদিকে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই নগরপিতার। অন্যান্য বছর মশার উৎপাত বন্ধে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঔষধ ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এবার সেরকম কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
মশার উৎপাত ঠেকাতে সিলেট সিটি কপোরেশনের ব্যর্থতাকে দোষছেন বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে কথা হয়-নগরীর আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা সঞ্চয় দাসের সাথে। তিনি জানান-মশার উপদ্রবের কারণে দিনের বেলাতেও শান্তিতে থাকার উপায় নেই। কয়েল দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না।কয়েল এর উপর আরো আরাম করে মশা বসে থাকে, মশারি লাগিয়ে রাখতে হচ্ছে। আমার বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তো, এর জন্যই বেশি প্রবলেম হচ্ছে। সন্ধ্যার পরেও যদি রাতে নয়টা-দশটার দিকে জানালা-দরজা একটু খুলি, মশায় সারা ঘর ভরে যায়। তিনি জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় দেয়া হয়নি মশা মারার কোন ঔষধও ।
মশার উপদ্রবের ঠিক একই চিত্রের কথা তুলে ধরেন নগরীর সুবিদ বাজার এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ হাসান জাবেদ। তিনি বলেন, আমি একজন প্রবাসী গত একমাস হলো আমি দেশে এসেছি। কিন্তু এই এক সপ্তাহে আমার এলাকায় মশার যে পরিমান যন্ত্রণা আমি দেখছি, এতে করে এখানে সুস্থ থাকার কোন উপায় নেই। নিজ তলা থেকে পাঁচ তলা সব জায়গায় একই অবস্থা। মৌচাকের মতো মশার মিছিল, আর যে জায়গায় কামড় দেয় সেই জায়গা লাল হয়ে দাগ পড়ে এবং ফুলে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের বেলায়। একেতো করোনার ভয় এর মাঝে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আছি।
আইন শৃংখলা রক্ষায় যারা নিয়মিত কামান দাগা করেন, তাদেরকে উল্টো কামান দাগিয়ে বেড়াচ্ছে মশা বাহিনী। অনেকটা দলবেধে হানা দেয় বলে জানালেন আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের দিন রাত ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। অফিসে বসে কাজ করাই দায় হয়ে পড়েছে মশার যন্ত্রণায়। একটু বিশ্রাম নিবেন সেটাও সম্ভব হয় না। একই অভিজ্ঞতা অন্যান্যদেরও । বাসা কিংবা অফিসে, সর্বত্রই যন্ত্রণার নাম মশা।
মশার উৎপাত ঠেকাতে সিলেট সিটি কপোরেশনের ব্যর্থতাকে দোষছেন সচেতন নাগরিকরা। এ ব্যাপারে সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- নগরীতে মশার উৎপাত বেড়ে চলেছে, এ ব্যাপার কোন খেয়াল নেই সিলেট সিটি কপোরেশন কর্তৃপক্ষের। দেশবাসী এখনও ডেঙ্গু আতঙ্কমুক্ত হতে পারেনি। বাড়ির ভেতরে ও বাইরে জমা পানিতে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নগরবাসীর অনেকেই সচেতন হচ্ছে না। সেই সাথে যারা এই নগরীর দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরও কোন খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। যে কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি আরো বাড়ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলদের আরো সচেতন হতে হবে। তাদের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকাবাসীকে সচেতন করতে হবে, কেউ যদি যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে তার উপর জরিমানা করতে হবে, তা না হলে এই মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। আর সিটি কপোরেশনের মাধ্যমে মশার ঔষধের ব্যবস্থা করা স্থানীয় কাউন্সিলরদের দ্বায়িত্ব। এ বছর মশা নিয়ন্ত্রণে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নি বলে আমার মনে হয়। ঠিক সময় মতো যদি ব্যবস্থা গ্রহন করা না হয় তাহলে মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। তাই এ বিষয় এ স্থানীয় কাউন্সিলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যপারে কাউন্সিলরদের সাথে কথা বললে- সিলেট সিটি কপোরেশনের পাঁচ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ জানান – আমি আমার ওয়ার্ডে বর্তমানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি, সব এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে আমি মশার ঔষধের ব্যবস্থা করবো। কত দিন পরে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটা তো বলতে পারবো না । এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না তা সিটি কপোরেশনের মেয়র মহোদয় বলতে পারবেন।
এ ব্যপারে সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়। গত দু’দিন থেকে অনেক বার তার মোবাইল ফোনে সহ বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায় নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন