যুগভেরী রিপোর্ট
নগরীতে এক যুককের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১টার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানাধীন চন্ডিপুল এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আলভীনের পেটে ও বাম উরুতে ধারালো ছুরির আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মারা গেছে আলভীন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অসম প্রেমের জের ধরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে লক্ষ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে দক্ষিণ সুরমা থানার পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম পুরো নাম আলভীন ফ্রেডরিক বিশ^াস (২৬)। সে সিলেট নগরীর লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করেছে। নগরীর নয়াসড়কস্থ খ্রীষ্টানদের প্রেসবিটারিয়ান চার্চের পাশে একটি বাসায় বসবাস করে আলভিনের পরিবার। তার বাবা রজার ফ্রেডরিক বিশ^াস নগরীর হকার্স মার্কেট এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হুমায়ুন রশিদ চত্বর সংলগ্ন ইউনিক বাসের কাউন্টারের সামনে একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষারত ছিল আলভিন বিশ^াস। এ সময় আকষ্মিকভাবে দুটি মোটর সাইকেল আরোহী ৪ যুবক আলভীনকে আক্রমন করে। মোটর সাইকেল আরোহী যুবকরা আলভীনকে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত ১ টার দিকে চন্ডিপুল এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে আলভীনের মৃতদেহ উদ্ধার করে দক্ষিণ সুরমা পুলিশ।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ওসমানী হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. রাশেদ জানান, আলভীনের পেটে ও বাম উরুতে দুটি ছুরিকাঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
আজ সকাল ৮ টার দিকে আলভীনের বাসা নয়াসড়কে আলভীনদের বাসায় গেলে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন মা প্রমীলা বিশ^াস।
আলভীনের বাবা রজার বিশ^াস জানান, তার ছেলের সাথে সহপাঠিনী সিপা বেগমের প্রেেিমর সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে আলভীন বিষয়টি তার মা বাবাকে জানায়। সে ঐ মেয়েকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু, রজার বিশ^াস বা প্রমীলা বিশ^াস কেউ-ই ছেলের এই অসম প্রেমকে মেনে নিতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলভীন ও শিপা পরষ্পর সহপাঠি। ২০১৫ সাল থেকেই তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, আলভীনের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। শিপাকেও অন্যত্র বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল তার পরিবার। ফলে, আলভীন ও শিপা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে পরিবারের অজান্তে বাড়ি ছেড়ে বুধবার সন্ধ্যার পর হুমায়ুন রশিদ চত্বরে আসে শিপা। আলভীন আগে থেকেই সেখানে একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় চলে যাওয়া। শিপা হুমায়ুন রশিদ চত্বরে পৌছালে অজ্ঞাতনামা দৃস্কৃতকারীরা আলভীনের উর হামলা চালায়। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে শিপাও আহত হন। এক পর্যায়ে দুস্কৃতকারীরা আলভীনকে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে চলে যায়। রাত সাড়ে ১ টার দিকে তার লাশ চন্ডিপুলে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন দক্ষিণ সুরমা থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
আজ সকালে এ বিষয়ে জানার জন্য শিপার বাড়িতে গিয়েও শিপাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার বিষয়ে শিপার পরিবারের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে, শিপার বাবা আনু মিয়া জানান, শিপা তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছে। আলভীনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম দৈনিক যুগভেরীকে জানান, হত্যা রহস্যা উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে গত রাতে তারা অভিযান চালিয়ে রেজাউল করিম ও হাবিবুর রহমান নামের দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন। এরা দুজনেই হুমায়ুন রশিদ চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত সন্দেহে শিপাসহ ৮ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি।