• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

মুুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ শুরু, নিহত ৩ পাকসেনা

Daily Jugabheri
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২১
মুুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ শুরু, নিহত ৩ পাকসেনা

অপূর্ব শর্মা :::
২৮ মার্চ নায়েব সুবেদার মোশারফ হোসেন এক প্লাটুন ইপিআর সদস্য নিয়ে আখালিয়ায় ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি প্লাটুনের উপর আক্রমন করেন। সংঘর্ষে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। আহত হয় ১০/১২ জন পাকসেনা এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। সংঘর্ষে পাকিদের ক্ষয়ক্ষতি অধিক হলেও তাদের তীব্র আক্রমনে বাধ্য হয়ে ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের পিছু হটতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে সিলেট শহরকে শত্রুমুক্ত করতে মেজর সিআর দত্তের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সিলেট অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকেন। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সংযোগস্থল শেরপুরে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাটি থাকায় শেরপুরকে শত্রুম্ক্তু করে সিলেটের দিকে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ নেন মুক্তিযোদ্ধারা।
শেরপুরে আক্রমন পরিচালনার জন্য হবিগঞ্জ থেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা শ্রীমঙ্গল হয়ে মৌলভীবজারে পৌছেন। ৩১ মার্চ মৌলভীবাজারে মুক্তিফৌজের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। সেখান থেকেই গ্রহন করা যুদ্ধ পরিকল্পনা। সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তিনটি কোম্পানীতে ভাগ করা হয়। ইউনুস চৌধুরী, আব্দুস শহীদ ও সুবেদার শামসুল আলমকে তিনটি কোম্পানীর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। ইউনুছ চৌধুরী আনসারদের নিয়ে গঠিত কোম্পানীর, আব্দুস শহীদ মোজাহিদদের নিয়ে গঠিত কোম্পানীর এবং সুবেদার শামসুল আলমকে সৈনিক, প্রাক্তন সৈনিকসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত কোম্পানীর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। মূলতঃ হবিগঞ্জ ট্রেজারি থেকে সংগৃহিত থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও দেশপ্রেম প্ুঁজি করেই পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিরোধ করার লড়াইয়ে নামেন দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা।
৪ এপ্রিল রাতে শেরপুরের একেবারে কাছাকাছি একটি স্থানে মেজর সি আর দত্ত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা করা হয়, পরদিন ভোররাতে শত্রুর উপর তিনদিক থেকে আক্রমন চালানোর। দু’টো করে প্লাটুন ডানে ও বা দিকে গিয়ে নদী পাড় হবে এবং অন্যান্য সৈন্যরা মুখোমুখি আক্রমন চালাবে। শত্রুবাহিনী সন্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পেছন দিক থেকে আক্রমন করবে। ভোর ৫ টায় মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ওপর অতির্কিতে হামলা চালায়। প্রথমে দিশেহারা হলেও পাকিরা কিছু সময় পর পাল্টা আক্রমন চালাতে থাকে। মুহুমুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। শেরপুর বাংকারে দুই প্লাটুন পাক আর্মি ছিলো। তাদের হাতে ছিলো আধুনিক অস্ত্র। মুক্তিবাহিনীকে প্রতিহত করতে তারা ৩ ইঞ্চি ও ৩/২ ইঞ্চি মর্টার চালাতে থাকে। যার ফলে পাশ্ববর্তী বাড়ি ঘর বিনষ্ট হতে থাকে। কাকডাকা ভোরে দিগি¦দিক পালাতে থাকে সাধারণ লোকজন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে আক্রমন-পাল্টা আক্রমনের মাত্রা। মুক্তিবাহিনী ক্রমশ তিন দিক থেকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর নির্ভুল নিশানার শিকারে পরিণত হতে থাকে পাকবাহিনী। এই অবস্থায় সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে শেরপুরের দখল ছেড়ে পাকবাহিনী সাদিপুরে পালিয়ে যায়। সাদিপুরে আগে থেকেই পাকিস্তান আর্মির এক প্লাটুন সদস্য অবস্থান করছিল। শেরপুরের সৈন্যরা সেখানে পৌছলে পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক মেজর সি আর দত্ত সাদিপুর আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে, দিনের বেলা আক্রমন পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন তিনি।
সাদিপুর যুদ্ধের প্রাক্কালে তেলিয়াপাড়া থেকে ক্যাপ্টেন আজিজের নেতৃত্বে ২নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানী এসে যোগদান করলে মুক্তিফৌজ-এর শক্তি কয়েকগুণে বৃদ্ধি পায়। সাদিপুরে পাকিস্তানীদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা হয় মুক্তিফৌজ, ইপিআর এবং সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানীদের কয়েকজন সৈন্য নিহত হয় এবং আবুল হাশিম নামে এক মুক্তিযোদ্ধা এক পাকিস্তানী সৈন্যকে অস্ত্রসহ বন্দী করতে সমর্থ হন। এ যুদ্ধেই শহীদ হন হবিগঞ্জের মহফিল হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন। সাদিপুরে পাকিস্তানী সৈন্যরা এতই বিপদাপন্ন ছিল যে সিলেট থেকে অতিরিক্ত সৈন্য এনে এবং কভারিং ফায়ার দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করতে হয়। এরপর পাকিস্তানীরা পালিয়ে সিলেট চলে যায় এবং সিলেট বিমানবন্দরে আশ্রয় গ্রহণ করে।
অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ৪ এপ্রিল সিলেটের হাসপাতালে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাজিত করে। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার নুরুল হক, ইপিআর বাহিনীর নায়েব সুবেদার গোলাম হোসেন, নায়েব সুবেদার মোখলেসুর রহমান, হাবিলদার ওয়াহিদুল ইসলাম, হাবিলদার হাফিজ উল্লাহ চৌধুরী এই অভিযানে অংশ নেন। ফলে সিলেট শহরের পূর্ব-উত্তর অংশের সকল পাকিস্তানী সৈন্য পালিয়ে সালুটিকর বিমান ঘাটিতে অবস্থান নেয়।
৭ এপ্রিল দেওয়ান ফরিদ গাজী ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ও স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সিলেট জেলে পৌছান। তার নির্দেশে মুক্তিলাভ করে জেলে আটক থাকা সকল বন্দি।

সংবাদটি শেয়ার করুন