• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

২৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা, বহিষ্কৃত ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলম গ্রেফতার

Daily Jugabheri
প্রকাশিত এপ্রিল ৮, ২০২১
২৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা, বহিষ্কৃত ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলম গ্রেফতার

বিন্দু তালুকদার, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::
হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ও ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খানকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বহিস্কৃত জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  বহিষ্কার করার এক ঘণ্টার মাথায় বুধবার বিকাল ৫ টায় আবুল হাসেম আলমকে জয়শ্রী বাজার থেকে আটক করে পুলিশ।  এর আগে বুধবার বিকাল ৪ টায় ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় আবুল হাসেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।  এদিকে গ্রেফতারকৃত আবুল হাসেম আলম, তার ছেলে আল মুজাহিদসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ধর্মপাশা থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দাখিল করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান। থানায় অভিযোগ দাখিল করার পর আটকৃকৃত আলমকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  থানার অভিযোগে প্রধান আসামী আলমের ছেলে আল মুজাহিদ, দ্বিতীয় আসামী আবুল হাসেম আলম। থানায় মামলা দায়ের করার বিষয়টি জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান।  মামলার দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম আলমকে জয়শ্রী বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।’
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিছ বলেন,‘ দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। আলম অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি।  ঘটনার জন্য জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ দায়ী।  আলমের উপস্থিতিতে তার ছেলে আল মুজাহিদের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে লাঞ্ছনার শিকার হন ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান (২৪)। আফজাল খানের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ¯œাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি পোস্টটি শুধু নিজে দেখতে পাওয়ার মতো ’অনলি মি’ করে রাখেন। তবে স্থানীয় কিছু যুবক আফজাল খানের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে যান। এসময় স্থানীয় জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদ (২৫) বেশ কিছু মানুষকে নিয়ে আফজাল খানের কাছে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ব্যাখা জানতে চান। তখন শিক্ষার্থী আফজাল তখন উপস্থিত সবাইকে বলেন,‘তিনি হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছেন।’
এনিয়ে শিক্ষার্থী আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে হঠাৎ করে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে মুজাহিদ ছাত্রলীগ নেতা আফজালের উপর চড়াও হয়। সে সময় আফজালের কয়েকজন বন্ধু ও স্থানীয় লোকজন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুজাহিদের পক্ষের লোকজন শিক্ষার্থী আফজালকে জয়শ্রী বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটক করে রাখে। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে তখন কয়েক শতাধিক মানুষ অবস্থান নেয়।
খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তারা ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ বলেন,‘ আফজাল খানকে লাঞ্ছিত করা হয়নি।’ হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মানুষ উত্তেজিত হয়েছিল। ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল।’
তবে ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান গণমাধ্যমে কাছে দাবি করেছেন, ধর্মপাশা থানার ওসির নির্দেশে তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিচয় পেয়ে মাঝপথেই পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। থানায় বসে তিনি রাতে পুলিশ সুপারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এরপর ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই রেখে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে হয়রানী করার ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে অবগত করার পরপরই মঙ্গলবার রাতে ধর্মপাশা থানার অভিযুক্ত থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন