নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শাল্লার উপজেলার সংখ্যালঘু নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক সমর্থকদের হামলা লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের আব্দুল রশিদের ছেলে হান্নান মিয়া (৫০) ও পার্শ্ববর্তী চন্ডিপুর গ্রামের সোয়েব মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (২২)। গতকাল সোমবার বিকালে জেলা ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। গত ২ মে থেকে নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনায় তিনটি মামলা তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
হান্নান মিয়া সরমঙ্গল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। মামলার প্রধান আসামী যুবলীগ নেতা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়াসহ মোট ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশ।
দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল বাহার বলেন,‘ নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে দুইজনকে শনাক্ত করে গতকাল সোমবার বিকালে তাদেরকে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সমর্থকরা ১৭ মার্চ বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮ টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করেছে। এসময় গ্রামের ৫ টি মন্দির ভাংচুর করা হয়। নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামের এক তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে মাওলানা মামনুল হককে কটাক্ষ করে কথিত স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সকাল ৯ টায় এই তা-ব চালানো হয়। নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক মামলা করা হয়। ১৫০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলার বাদী শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম। নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর পক্ষে অন্য মামলাটি করেছেন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। এরপর ২৫ মার্চ আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সেই ঝুমন দাশের মা নিভা রানী দাশ। পৃথক তিনটি মামলায় আসামী করা হয়েছে দিরাই থানার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর ও নাচনী এবং শাল্লা থানার হবিবপুর কাশিপুর গ্রামের নামাংকিত ৫০ জনসহ ১৫০০ জনকে। মামলার প্রধান আসামী ঘটনার উস্কানীদাতা নাচনী গ্রামের বাসিন্দা সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়া। গত ২ মে থেকে তিনটি মামলা তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার পর্যন্ত মোট ৫৮ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। এরমধ্যে ৯ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এর আগে ১৫ মার্চ গত সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই স্টেডিয়ামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। এসময় ধর্মীয় উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা।