যুগভেরী রিপোর্ট :::
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি বলেছে, বিষয়টির দিকে তারা নজর রাখছে।
মঙ্গলবার (১৯ মে) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিককে হয়রানি ও গ্রেপ্তার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা নজর রাখছি। বিষয়টি স্পষ্টতই উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কোনোভাবেই হয়রানি বা শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেটা বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে হোক।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এর পরদিন মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে সিএমএম আদালতে তোলা হয় রোজিনাকে। এর আগে তাকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে রোজিনা আদালতে পৌঁছান। সে সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
পরে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রোজিনা ইসলামের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ২০ মে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতের আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি :
সচিবালয়ে হেনস্তার শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও হেনস্তাকারী স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সিলেটের সাংবাদিকরা।
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাব আয়োজিত ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রেসক্লাব সদস্য সহ ইমজা ও ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিতে এমন দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা।
প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমাদ সেলিমের পরিচালনায় এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মো. রেনু।
সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। করোনাকালীন সময়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যা দেশবাসীর জানা। তার লিখনিতে এ খাতে ব্যাপক অনিয়ম জনসম্মুখে এসেছে। অথচ আজ তাকেই জেলে থাকতে হচ্ছে। আর দুর্নীতিবাজ, অপরাধী যারা তারা বাইরে আছে। তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে গেলে সচিবালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে তা উদ্বেগজনক এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আজ বিশ্ব গণমাধ্যমে এ খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই আমি বলব যারা এমন জঘন্য কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হোক একই সাথে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হোক।
এ সময় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজ যেভাবে রোজিনা ইসলামের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সাথে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতি জনসম্মুখে নিয়ে আসতে হবে। কারণ অনুসন্ধানের বিকল্প নেই।’
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাজই হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা। তথ্য সংগ্রহ যদি অপরাধ হয় তাহলে রোজিনা ইসলাম একা অপরাধী নয়। সারা দেশের সকল সাংবাদিক অপরাধী। তাই সকল সাংবাদিকদের জেলে নেওয়া হোক। তাহলে আর কেউ দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবে না।’
বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সহ-সভাপতি এম এ হান্নান ও আবদুল কাদের তাপাদার, সিনিয়র সদস্য আব্দুল মালিক জাকা, সাবেক সহ-সভাপতি আফম সাঈদ ও মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, সদস্য আব্দুল বাতিন ফয়সল, মো. মুহিবুর রহমান, শেখ আশরাফুল আলম নাসির, আনিস রহমান, মাইদুল ইসলাম রাসেল, শাহ শরীফ উদ্দিন, শাকিলা আক্তার ববি প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. আফতাব উদ্দিন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মারুফ আহমদ, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবির আহমদ, নির্বাহী সদস্য আশকার ইবনে আমিন লস্কর রাব্বী ও আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য নাজমুল কবীর পাভেল, মো. দুলাল হোসেন, এম এ মতিন, আবু সাঈদ মো. নোমান, ইউনুছ চৌধুরী, শুয়াইবুল ইসলাম, নৌসাদ আহমেদ চৌধুরী, গোলজার আহমেদ, নিরানন্দ পাল, মো. মারুফ হাসান, মানাউবী সিংহ শুভ, হোসাইন আহমদ সুজাদ, এটিএম তুরাব, শাফী চৌধুরী, দিপক বৈদ্য দিপু, মাধব কর্মকার, সাকিব আহমদ মিঠু, সহযোগী সদস্য এইচ এম শহীদুল ইসলাম। এছাড়াও এসএ টিভির প্রতিনিধি আবু বকর আল আমিন, দৈনিক প্রথম আলোর আলোকচিত্রি আনিস মাহমুদ, ফটো সাংবাদিক মামুন হোসেন ও আজমল আলী প্রমুখ।
নারী সাংবাদিকদের মানববন্ধন :
সচিবালয়ে হেনস্তার শিকার দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন সিলেটের নারী সাংবাদিকরা। এসময় তারা হেনস্তাকারী স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বুধবার (১৯ মে) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদমিনার প্রাঙ্গণে বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, সিলেট আহবায়ক কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার একদিকে তথ্যের অবাধ ব্যবহার ও প্রাপ্তির জন্য তথ্য অধিকার আইন করছে। সুশাসন নিশ্চিতের জন্য শুদ্ধাচার কৌশল অবলম্বন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে ছাড় দিয়ে রেখেছে। আর তাদের দুর্নীতি যখনই সাংবাদিকরা প্রকাশ করেন তখন তাদের হেনস্তা করতো উঠে পড়ে লাগেন আমলারা। মামলা, হামলা, চুরির অপবাদ পর্যন্ত দিতে দ্বিধাবোধ করেন না তারা।
বক্তারা বলেন, দেশ আজ উল্টো পথে পরিচালিত হচ্ছে। তা না হলে যেখানে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হওয়ার কথা সেখানে আজ যিনি দুর্নীতি জনগণের সামনে প্রকাশ করছেন তার শাস্তি হচ্ছে। এসব চিত্র দেখার পরও সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকা সুশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
মানববন্ধনে বক্তারা রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনকারীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি জানান। সেইসাথে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জিটিভির সিলেট প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সিলেট শাখার আহবায়ক বিলকিস আক্তার সুমি, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিকা ইসলাম, চ্যানেল আই ও সবুজ সিলেটের সিলেট প্রতিনিধি সুবর্না হামিদ, সিলেট টুডে টুয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক শাকিলা ববি, দৈনিক সিলেট মিররে নিজস্ব প্রতিবেদক বুশরা নূর, দৈনিক সুদিনের সহ সম্পাদক ফাতেমা সুলতানা অন্যা, নিউইয়র্ক মেইলের স্টাফ রিপোর্টার অমিতা সিনহা প্রমুখ।
এই মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত শাহ ফরিদি, সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ বাবলু, সাংবাদিক শেখ নাসির, সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি, সাংবাদিক ইউসুফ আলী, সুলতান সুমন, আজমল আলী, মিঠু দাশ জয়, মোস্তাফিজুর রহমান, রাহেল আহমেদ, মোজোম্মেল হোসেন, আশরাফ চৌধুরী রাজু, শফিকুল ইসলাম, শফি আহমদ প্রমুখ।
শাবি প্রেসক্লাবের নিন্দা :
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে হেনস্তা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরানোর মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব’।
মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়ের মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আল রাজী এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান।
যৌথ বিবৃতিতে শাবি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। পরে ঢাকার শাহবাগ থানায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে চুরির অভিযোগে এবং ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সরানো ও অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলার অভিযোগে মামলা করা হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে। সম্প্রতি রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ, টিকা নিয়ে অব্যবস্থাপনা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেই আক্রোশ থেকেই তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং আটক করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে বলেও আমরা মনে করি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
কমলগঞ্জে মানববন্ধন :
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক সমাজ মানবন্ধন করেছেন।
বুধবার (১৯ মে) দুপুর ১২টা উপজেলা চৌমুহনী চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রথম আলো প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান রঞ্জুর সভাপতিত্বে ও মানবজমিন প্রতিনিধি সাজিদুর রহমান সাজুর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল এস পলাশ, সাপ্তাহিক কমলগঞ্জ সংবাদের সম্পাদক এড. মো. সানোয়ার হোসেন, একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মানিক শিকদার ও মাসুমা লিসা, কবি শহীদ সাগ্নিক প্রমুখ। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, ঠিক সেই সময়ে সাংবাদিক রোজিনার উপর টুটি চেপে ধরছে স্বাস্থ্য খাতের আমলারা। রোজিনা ইসলামের উপর যে ন্যক্কারজনক হামলা সচিবালয়ে ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় এটি মুক্ত সাংবাদিকতার উপর একটি নগ্ন হস্তক্ষেপ। সচিবালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের উপর ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করে এমন সকল কালো আইনের বিলুপ্তি চাই। রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।
বড়লেখায় মানববন্ধন :
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা প্রেসক্লাব।
বুধবার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বড়লেখা পৌর শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এতে বড়লেখা প্রেসক্লাব সভাপতি সংবাদ প্রতিনিধি অসিত রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ও ইত্তেফাক প্রতিনিধি তপন কুমার দাসের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সমকাল প্রতিনিধি আইনজীবী গোপাল দত্ত, সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শিক্ষক লুৎফুর রহমান চুন্নু, নজরুল একাডেমির উপদেষ্টা জুনেদ রায়হান রিপন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক কায়সারুল ইসলাম সুমন ও সমাজসেবী সংগঠন ফ্রেন্ডস ক্লাব ইউকের বড়লেখা প্রতিনিধি নাজিম উদ্দিন, যুগান্তর প্রতিনিধি সাংবাদিক আব্দুর রব, কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি লিটন শরীফ, আমাদের সময় প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন স্বপন, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, যায়যায়দিন প্রতিনিধি সুলতান আহমদ খলিল, সকালের সময় প্রতিনিধি ময়নুল ইসলাম।
এসময় উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি জালাল আহমদ, একাত্তর কথা প্রতিনিধি আদিব মজিদ, মানবজমিন প্রতিনিধি এ.জে লাভলু, খোলা কাগজ ও সিলেটটুডে প্রতিনিধি রিপন দাস ও সোনালী খবর প্রতিনিধি মস্তুফা উদ্দিন, ফ্রিল্যান্সার তাওহিদ সারওয়ার মান্না, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান শুভাশিষ দে শুভ্র, নাট্যকর্মী হানিফ পারভেজ, ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, নিসচার সভাপতি তাহমীদ ইশাদ রিপন, আইনজীবী সহকারী গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য বিভাগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। শুধু রোজিনা ইসলাম নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনা ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি হেনস্তাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের মানববন্ধন :
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের গনমাধ্যমকর্মীরা।
বুধবার (১৯ মে ) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলায় কর্মরত গনমাধ্যমকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। এই মানববন্ধনে টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইমজা, মৌলভীবাজার একাত্মা প্রকাশ করেছে।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুব, প্রেসক্লাব সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম শেফুল, বাংলার দিন পত্রিকার সম্পাদক বকশী ইকবাল আহমদ, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আহমদ, এস এম উমেদ আলী, সালেহ এলাহি কুটি, ইমজা সাধারণ সম্পাদক বকশী মিছবাহুর রহমান, প্রথমআলো নিজস্ব প্রতিবেদক আকমল হোসেন নিপু।
এ সময় বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এর নি:শর্ত মুক্তি সহ হেনস্তাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন বক্তারা। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করে এমন সকল কালো আইনের বিলুপ্তি দাবী করেন তারা।
মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে ডিআরইউর:
মামলা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
বুধবার ডিআরইউর এক সমাবেশ থেকে সচিবালয়ে রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
দুপুরে ডিআরইউ চত্বরের এই সভায় এ সমাবেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান।
সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ তুলে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনাকে।
পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।ওই মামলায় এই সাংবাদিক এখন কারাগারে।
রোজিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকার প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিআরইউও প্রতিবাদ সমাবেশ করল।
সমাবেশে সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের বোন রোজিনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের চোখের সামনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন, তবুও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই করতে পারিনাই। আমরা অসহায় ছিলাম।
“আমরা রোজিনা আপার নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
টেলিকম রিপোর্টার্স, বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, “রোজিনা ইসলাম জেলে আছেন মানে আমরা সব সাংবাদিক জেলে আছি। আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ দেখি নাই, পাকিস্তান উপনিবেশ দেখি নাই, কিন্তু বাংলাদেশে এখন আমরা প্রশাসন ক্যাডারের উপনিবেশ দেখছি।”
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হক বলেন, “যে আইনে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সামান্যতম ন্যায়বিচার হলেও তার জামিন সম্ভব। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
“স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তারা রোজিনাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করেছেন, অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি নাদিরা কিরণ বলেন, “রোজিনার উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে সাংবাদিকদের উপরই নির্যাতনের শামিল। শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আন্দোলনকে চালিয়ে রাখা যাবে না। তার শুধু জামিনই নয়, বরং নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”
ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান বলেন, “এটি কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নয়, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য অধিকারের বিষয়টিকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।।”
ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিন আল রশিদ বলেন, “অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে যে মামলা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হতে পারে না।
“এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশের কোনো সরকারি অফিসের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া যাবে না। এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বলে কিছু থাকবে না।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, “তথ্য গ্রহণ করা মানেই তথ্য চুরি নয়। রোজিনা যে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ক্রসচেকের উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছেন।
“বৃহস্পতিবার আদালতে জামিনের শুনানি হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।”
রোজিনার বিরুদ্ধে যে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
তারা বলেন, রোজিনাকে ‘শারীরিক নির্যাতনকারী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করা উচিৎ।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তার উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যান।