• ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

দিরাইয়ে বাসে কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা : চালকের সহকারি পলাতক : অভিযোগপত্র প্রদান

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জুন ২৪, ২০২১
দিরাইয়ে বাসে কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা : চালকের সহকারি পলাতক : অভিযোগপত্র প্রদান

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::::
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যাত্রীবাহী বাসে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় বাসের চালক শহীদ মিয়া (২৫), দুই সহকারী বশির আহমদ (৩২) ও আবু বক্কর (১৭ বছর ১০ মাস) এর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ঘটনার দুই মাসের মাথায় আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিরাই থানার এস, আই রাজেশ বড়–য়া। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তিনি।
বাসের চালক শহীদ মিয়া ও সহকারি বশির আহমদ গ্রেফতারের পর কারাগারে রয়েছে। কিন্তু ঘটনার প্রায় ছয় মাসেও গ্রেফতার হয়নি চালকের সহকারি আবু বক্কর। তবে দিরাই থানার দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছে, পলাতক আবু বক্করকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে সিলেটের লামাকাজীর বোনের বাড়ি থেকে দিরাইয়ে আসার পথে দিরাই পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের পাশে যাত্রীবাহী বাসে একা পেয়ে দিরাই কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বাস চালক শহীদ মিয়া ও তার দুই সহকারি বশির আহমদ ও আবু বক্কর। এসময় ওই ছাত্রী চলন্ত বাস থেকেই লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। আহত কলেজ ছাত্রী প্রথমে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় রাতেই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাস চালক সিলেটের জালালাবাদ থানার মোল্লারগাঁও গ্রামের তৌফিক মিয়ার ছেলে শহীদ মিয়া (২৫), চালকের সহকারি ছাতক থানার কামরাঙ্গী গ্রামের হাবিব আহমদের ছেলে বশির আহমদ (৩২) ও বাস চালকের মোল্লারগাঁও গ্রামের রইছ আলীর ছেলে আবু বক্কর (১৭ বছর ১০ মাস) কে আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। দিরাই থানার পুলিশ রাতেই বাসটি জব্দ করে।
ঘটনার পরদিন ২৭ ডিসেম্বর রবিবার রাতে সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বুরাইরগাঁও গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে চালকের সহকারি বশির আহমদকে গ্রেফতার করে। ২৮ ডিসেম্বর সোমবার বশির আহমদ দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। এরপর গত ২ জানুয়ারি ভোরে সুনামগঞ্জের পুরাতন বাসস্টেশন থেকে পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগ (সিআইডি) বাসচালক শহীদ মিয়া (২৫) কে গ্রেপ্তার করে। এরপর শহীদ মিয়াকে তিন দিনের রিমা-ে নেয় পুলিশ। কিন্তু রিমান্ডে কোন কিছুই স্বীকার করেনি তিনি। ঘটনার দুই মাসের মাথায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাসচালক শহীদ মিয়া ও তার দুই সহকারির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিরাই থানার এস, আই রাজেশ বড়–য়া। (অভিযোগপত্র নং-২২, তারিখ- ২৮/২/২০২১ খ্রি.)। আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই কলেজে ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণ চেষ্টা করেছিল বাসের চালক ও সহকারিরা।
এদিকে ঘটনার মূল হুতা বাস চালক শহীদ মিয়ার পরিবার ধর্ষণ চেষ্টার জঘন্য ঘটনাটি আপোষে নিষ্পত্তি করার জন্য কলেজ ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক প্রলোভন দিয়েছিলো বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রীর মা-বাবা। গত চৈত্র (এপ্রিল) মাসে বাস চালক শহীদের মা-বাবা, স্ত্রী ও পরিবারের অন্যরা দিরাইয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে এসে অর্থের বিনিময়ে মামলা আপোষের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আপোষে নিষ্পত্তি না করে ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন ছাত্রীর মা-বাবা।
কলেজ ছাত্রীর মা ও বাবা বলেছেন,‘বাস চালকের মা-বাবা ও তার স্ত্রী-সন্তান আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তাদের ছেলে আমাদের মেয়ের সাথে জঘন্য আচরণ করলেও আমরা তাদের সাথে খারাপ আচরন করিনি। তারা টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তি করার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমরা ষ্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে কোন বাসের চালক কারো সাথে খারাপ আচরণ করার সাহস না পায়।’
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান বলেন,‘ ঘটনার দিন ওই ছাত্রী লামাকাজী থেকে বাসে করে দিরাইয়ে আসছিল। পথে বাসের চালক ও সহকারিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। এক পর্যায়ে ওই মেয়ে লাফ দিয়ে বাস থেকে নেমে পরে। এই ঘটনায় থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বাস চালক শহীদ মিয়া ও সহকারি বশির আহমদ গ্রেফতার হয়েছে। আদালতে তিন জনের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আবু বক্কর পলাতক আছে, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন