• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে পশুর হাট বসাতে চায় সিসিক !

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জুন ২৫, ২০২১
নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে পশুর হাট বসাতে চায় সিসিক !

যুগভেরী ডেস্ক ::: সিলেট নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ ৬ টি সড়কের মোড় ও দুটি মসজিদের পাশে ঈদুল আজহা উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বরাবর এই প্রস্তাবনা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

সিসিকের এমন আচরনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিলেটের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।  এমনকি এ প্রস্তাবনায় তারা রীতিমত বিষ্মিত।  করোনাকালীন এই সময়ে কিভাবে সিসিক এমন পরিকল্পনা করে, এমন প্রশ্ন সুশীল সমাজের লোকজনের।

সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জুন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী ৮৬৮/৩ নম্বর স্মারকে সিলেট জেলা প্রশাসকের বরাবরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬ টি সড়কের মোড় ও দুটি মসজিদের পাশে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য আবেদন করেন।

আবেদনটি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (এসএমপি) ও মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারীকে অবগত করা হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশন জনগণের যাতায়াতের রাস্তা ও মসজিদের পাশে ঈদ উপলক্ষে জনসামগমপূর্ণ পশুরহাট বসানোর বিষয়ে ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন সিলেটের সচেতন নাগরিক সমাজ।

তারা জানান সিসিকের এধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্থায় অস্থায়ি পশুর হাট না বসাতে প্রয়োজনে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।

সিসিক’র আবদনে যে ৮টি স্থানে অস্থায়ি পশুর হাট বসানোর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো হল- আম্বরখানা আবাসন সংলগ্ন মাঠ, চৌকিদেখি পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্থার উপর, রিকাবীবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্থার জায়গা, মদিনা মার্কেট নবাবী মসজিদ সংলগ্ন জায়গা, মাছিমপুর কয়েদীর মাঠ, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্থা উপর জায়গা, দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অবব্যহৃত জায়গা, ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন জায়গা।

এরমধ্যে রয়েছে সিসিক’র ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত আম্বরখানা আবাসন সংলগ্ন মাঠ ও চৌকিদেখী পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তা। এ দু’টি স্থান সিলেটের বিমানবন্দর সড়কে অবস্থিত। সরকারি বিধি অনুযায়ি একটি হাট থেকে আরেকটি পশুরহাট তিন কিলোমিটার দুরত্বে হওয়া উচিত। অথচ মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত দুই স্থানের সড়কের উপর দুইটি পশুরহাট বসানোর আবেদন করেছে সিসিক। চৌকিদেখি ও আম্বরখানা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, আম্বরখানা আবাসন মাঠ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দুই পক্ষের বিরোধ রয়েছে। আর ওই স্থানে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।

এছাড়া এয়ারপোর্ট সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শতশত ট্রাক ও নানা ধরণের যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে ভিআইপিদের চলাচল ওই সড়ক দিয়ে বেশী। প্রায়ই ওই সড়কে দূর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি উর্ধ্বগতি। ওই দুটি স্থানে অস্থায়ী হাট বসালে পরিবেশের ক্ষতি ও জনগণ নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে পারেন বলে ধারণা করছেন স্থানিয়রা।

অন্যদিকে দক্ষিণ সুরমাস্থ ঝালোপাড়া মসজিদের পাশে যে খালি জায়গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি অস্থায়ি পশুর হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। শেষমেষ রাস্থার উপরই বসাতে হবে হাট। তাছাড়া স্থানটি একটি আবাসিক এলাকা। আর পাশেই রয়েছে মসজিদ ও ফল মার্কেট। সেখানে পশুর হাট বসালে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই ওই স্থানে অস্থায়ি পশুর হাট না বসাতে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানিয়রা।

এদিকে, মদিনা মার্কেটস্থ নবাবী মসজিদ সংলগ্ন জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ ও মামলা রয়েছে। তাছাড়া ওই স্থানের পাশেই রয়েছে বিডিআর ক্যাম্প, মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক। ফলে সেখানে পশুর হাট বসলে যেমন জনগণের ক্ষতি হবে। তেমনি বিরোধপূর্ণ হওয়ায় সেখানে সংর্ঘষের আশংঙ্কা করছেন স্থানিয়রা।

এছাড়া নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে পশুর হাট বসানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত জায়গা। সেখানে রাস্থার উপর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ পরিবেশ নষ্ট ও স্থানিয় ব্যবসায়ি এবং বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়িদের হয়রানির কথা চিন্তা করে গত বছর টিলাগড় পয়েন্টে পশুর হাটের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। কিন্তু এবার সেখানে পশুর হাট বসাতে আবেদন করেছে সিসিক।

অপরদিকে, রিকাবীবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন যে স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে পশুর হাট বসানোর মতো কোন স্থান নেই। সেই স্থানটি রাস্তার উপরে অবস্থিত। সিলেটের গরুত্বপূর্ণ ৪টি সড়ক এসে মিলিত হয়েছে ওই স্থানে। ওই মোড়ের পাশেই রয়েছে পুলিশ লাইন্স, কবি নজরুল অডিটোরিয়াম, ডাক্তারপাড়া খ্যাত সিলেট স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ রোডসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে ঘোষিত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল।

যার ফলে ওই মোড়ে সড়কের উপর পশুর হাট বসানোর অনুপযোগী স্থান বলে জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকবৃন্দ। আর মাছিমপুরস্থ কয়েদীর মাঠে অস্থায়ি পশুর হাট বসানো নিয়ে প্রতিবছরই বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ফলে ঘটে হতাহতের ঘটনা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব। তাই সড়কের উপর বা জনগরুত্বপূর্ণ স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এমনকি রাস্থার পাশে অস্থায়ি পশুর হাট বসাতে মরিয়া হয়ে উঠে রাজনৈতিক লেবাসধারিরা নেতা ও পাতি নেতারা। তাই তারা জনগণের চিন্তা না করেই যত্রতত্র বসায় পশুর হাট। আর সিটি করপোরেশন সবসময় সড়ক উম্মুক্ত রাখতে হকার উচ্ছেদসহ নানা ধরণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু তারা যদি রাস্থার উপর হাট বসাতে চায়, তাহলে সেটা হাস্যকর। সিলেট সিটি করপোরেশন রাস্থার উপরে ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পশুর হাট না বসিয়ে বিভিন্ন মাঠে হাট বসাতে পারে। এতে করে জনগণেরও কোন ক্ষতি হবে না।

সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, আমরা অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তবনা পাঠিয়েছি। যেহেতু করোনাকাল তাই মেয়র ‘মহোদয়’ যাতে করোনার বিস্তৃতি না হয় সেজন্য এসব জায়গায় হাটের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। ঈদের আগে অনেকেই মাঠ দখল করে হাট বসিয়ে দেয়। যাতে অবৈধভাবে কেউ হাট বসাতে না পারে এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক যদি অনুমতি প্রদান করেন। তবেই বসবে পশুর হাট।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান জানান,সিসিক এলাকায় পশুরহাট বসানোর বিষয়ে এখনো কোন আবেদন পাননি। আবেদনপত্র তাদের কাছে গেলে যাচাই-বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিসারুল আরিফ জানান, সিলেট নগরীতে অস্থায়ি পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে সিসিকের কোন প্রস্তাবনা/আবেদন পাননি। আবেদন পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন