যুগভেরী ডেস্ক
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দূর্গা পূজা। আজ সপ্তমী সায়ংকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হয়ছেনে দেবী। আর এর সঙ্গেই শুরু হল বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।
বোধন শব্দটির অর্থ জাগ্রত করা। মর্ত্যে দুর্গার আবাহনের জন্য বোধনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। এ দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন। ষষ্ঠীর সকালেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর দশভূজার সামনে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পূজা পর্বে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এরপর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়। এর পর হয়, দুর্গার বোধন। তার পর অধিবাস, আমন্ত্রণের পর্ব। বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়।
স্বর্গ থেকে মর্ত্েয পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে থাকেন চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। এদিন দুর্গার মুখের আবরণ উন্মোচিত হয়। মনে করা হয়, বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বোধন আবার অকাল বোধন হিসেবে খ্যাত। হিন্দু শাস্ত্র মতে, সূর্যের উত্তরায়ন দেবতাদের সকাল। উত্তরায়নের ছয় মাসকে দেবতাদের একদিন হিসেবে গণ্য করা হয়। সকালে সমস্ত দেব-দেবীর পূজা করা হয়। আবার দক্ষিণায়ন শুরু হলে ছয় মাসের জন্য নিদ্রা যান সমস্ত দেব-দেবী। এই দক্ষিণায়ন দেবতাদের রাত। রাতে দেব-দেবীর পূজা করা হয় না। কিন্তু দক্ষিণায়নের ছয় মাসের মধ্যেই দুর্গাপূজা হয় বলে বোধনের মাধ্যমে আগে দেবী দুর্গাকে ঘুম থেকে তোলা হয়। পুরাণে এর সঙ্গে একটি কাহিনিও জড়িত। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দুর্গার বোধন করেছিলেন রামচন্দ্র। এর পর দুর্গার আরাধনা করে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করেন তিনি। অকালে দুর্গাকে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল বলেই একে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। তবে করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত বছরের মতো এবারও সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোয় দুর্গোৎসব আয়োজনে মানতে হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি।
পূজার আয়োজনকে ঘিরে নানা বিধিনিষেধের কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। গত বছরের মতো এবারও উৎসব-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে এ পূজাকে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা যেমন থাকবে না, তেমনি বিসর্জনের শোভাযাত্রাও এবার হবে না।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর দেবীদুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। সাধারণত দেবীপক্ষ শুরুর সাত দিন পর পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে থাকে। তবে এবার পঞ্চমীর বোধন ও ষষ্ঠী তিথি একই দিনে পড়ায় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিনক্ষণও এক দিন এগিয়ে এসেছে।
আজ মহাসপ্তমী, বুধবার মহাষ্টমী, বৃহস্পতিবার মহানবমী এবং শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হবে। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার মহাষ্টমীতে ঢাকায় কুমারী পূজার আয়োজন থাকছে না। তবে দেশের কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হবে।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবীদুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনার প্রকোপ কমে আসায় গত বছরের তুলনায় এবার দুর্গাপূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা যেমন বেড়েছে, তেমনি ঢাকাসহ সারাদেশে মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যাও বেড়েছে। এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩০ হাজার ২০৭টি মণ্ডপে। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ কমায় এবার এক হাজার ৯০৫টি পূজা বেড়েছে। সরকারি হিসাবে অবশ্য এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ৭১৭টি মণ্ডপে পূজা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৩৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন থাকছে, যা গতবার ছিল ২৩২টি। অর্থাৎ ঢাকা মহানগরীতে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৫টি।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজনও থাকবে।দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ এবং র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।