• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ছাতকে জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২১
ছাতকে জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

শংকর দত্ত, ছাতক প্রতিনিধি::

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। বলা যাবে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙে। দিন-রাত সমানতালে ভোটারদের সাথে মতবিনিময়সহ চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে প্রচারাভিযান। ভোটারদের মন জয় করে নিজেদের ভোটের পাল্লা ভারী করতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা।

২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়। সমর্থকদের সাথে নিয়ে মাঠে-ময়দানে কোমর বেঁধে প্রচারনায় নেমে পড়েন প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে উৎসব অামেজের মতোই পোষ্টার শোভা পাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজার, ভোট কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ন স্থানে। মাইকিংয়ের নানা গানে-ছন্দে-ছন্দে কন্ঠ মিলিয়ে প্রার্থীদের নাম এবং তার প্রতীকের কথা ভোটারদের কাছে জানান। কখনো দিয়ে ভোট কামনা করছেন। সব মিলিয়ে উপজেলার সদর, ইসলামপুর, কালারুকা, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, খুরমা উত্তর, খুরমা দক্ষিণ, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, ছৈলা-আফজলাবাদ, দোলারবাজার ইউনিয়নের সবথানে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চেয়ারম্যান, সদস্য-সদস্যা প্রার্থীদের নির্বাচন। ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫১জন ও সদস্য এবং সদস্যা পদে ৪৭২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জানা যায়, ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রথম ধাপে উপজেলার নোয়ারাই ও সিংচাপইড় দুই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় স্থগিত হওয়া ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। অবশিষ্ট ১০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছেন অনেকেই। এখানে ৫১জন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ২৬জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। সকলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘুরছেন মাঠে। এ কারণে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থন ও প্রচার-প্রচারনায় এগিয়ে আছেন। সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বিএনপি, জামায়াতীয় অনেকপ্রার্থীয়। যদিও তারা ভোটে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রতিক নিয়ে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সকল প্রার্থীরা প্রচারাভিযান ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠছেন।

জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান (আনারস) প্রতীকে লড়ছেন। এবার নৌকা না পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। গেল নির্বাচনে আখলাকুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আ.লীগের মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান সুন্দর আলী (নৌকা) ও আ.লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী, সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন (মোটরসাইকেল)। এখানে ত্রিমুখী ভোট যুদ্ধ হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮হাজার ৮৭৬জন।

ছাতক সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি গেল নির্বাচনে নৌকা পেলেও এবার বঞ্চিত হন। এ কারণে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী রঞ্জন কুমার দাস একজন নতুনমূখ। রঞ্জন কুমার দাস ও সাইফুল ইসলামের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ইউনিয়নবাসী। এ ইউনিয়নে রয়েছে ৮হাজার ৮৪ ভোট।

ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হেকিম (নৌকা), সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল (টেলিফোন) এবং খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা আকিক হুসাইন (চশমা)। তারা প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র। ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ইউনিয়নের একাধিক ভোটার। ওই ইউনিয়নে মোট মোটার ২১হাজার ২শ’৮৫জন।

কালারুকা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান অদুদ আলম (নৌকা) ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আশরাফুল আলম (আনারস) এই দু’প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে মন্তব্য ভোটারের। ইউনিয়নে ভোটারের সংখ্যা ২৩ হাজার ৪০৮জন। চরমহল্লা ইউনিয়নে মোটা ভোটার ১৬ হাজার ২৮৩জন। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা আবুল হাসনাত (মোটরসাইকেল) ও সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া (নৌকা) প্রতীকের মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে। গেল নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে কদর মিয়া পরাজিত হয়েছিলেন আবুল হাসনাতের (ধানের শীষের) কাছে।

খুরমা উত্তর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ (নৌকা), বিদ্রোহী প্রার্থী তার চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন (মোটরসাইকেল) ও সামছুল ইসলাম খান (আনারস)। এই তিনজন প্রার্থী শক্তিশালী অবস্থানে মাঠে আছেন। ভোটারদের ধারণা ওই ইউনিয়নে ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিল্লাল আহমদ ও সামছুল ইসলাম খানের মধ্যে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা ১৩হাজার ৩৯জন।

জাউয়াবাজার ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান, মুরাদ হোসেন (মোটরসাইকেল) বিদ্রোহী প্রার্থী। গেল নির্বাচনেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভও করেছিলেন। তার সাথে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, বিদ্রোহী প্রার্থী রেজা মিয়া তালুকদার (আনারস) ও জাউয়াবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আছাদুর রহমান (চশমা)। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২৪হাজার।

খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির (নৌকা), বিদ্রোহী প্রার্থী  আবু বক্কর সিদ্দিক (ঘোড়া), জয়নাল আবেদীন (টেলিফোন) ও আবদুল খালিক (চশমা) প্রতীক প্রচারনায় এগিয়ে আছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬হাজার ৬৩২জন।

দোলারবাজার ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সায়েস্তা মিয়া (নৌকা), সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আলম (চশমা) ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমির উদ্দিন (মোটর সাইকেল) প্রচারনায় এগিয়ে আছেন বলে স্থানীয় ভোটারের ধারণা। এ ইউনিয়নে ২৩ হাজার ২১৬ ভোট রয়েছে।

ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ (নৌকা) ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী নানু মিয়ার (চশমা) প্রতীকের মধ্যে হবে মূল ভোট যুদ্ধ। এই ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা ২১হাজার ৪৪২।

এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থী ও সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, কিন্তু এ বিষয়ে এখনো ভ্রাম্যমান আদালতের কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়েজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী কোন আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে দ্রুত।

সংবাদটি শেয়ার করুন