• ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

‘ডাল-ভাতেও যে পেট পুরতে পারিনা এর খবর কি কেউ রাখে?’

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২১
‘ডাল-ভাতেও যে পেট পুরতে পারিনা এর খবর কি কেউ রাখে?’

গোলাপগঞ্জের বাজার ব্যবস্থা

জয় রায় হিমেল, গোলাপগঞ্জ ::  ‘এক রোজ কাজ করলে পাই ৪শ-৫শ টাকা। সারাদেশের উন্নয়নের কথা টিভিতে শুনতে পাই-কিন্তু এদিকে আমরা ডালভাতেও যে পেট পুরতে পারিনা তার খবর কি কেউ রাখে?। সীমিত এ রোজগার দিয়ে ৫সদস্যের পরিবারে মাছ-মাংস তো দূরে থাক চাল-ডাল-তেল কিনেই পুষিয়ে উঠতে পারিনা’। চাপা কষ্ট মনে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন গোলাপগঞ্জ বাজারে আসা নির্মানশ্রমিক লোকমান মিয়া। জানান বৃদ্ধ মা, ২ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে ৫ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তিনি। সারাদিন খেটে রোজগার করে যা পান তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে নিজেকে বড় অসহায় বোধ করছেন।

সারাদেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জেও বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজারদর দিন-মজুর কিংবা খেটে খাওয়া ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় হতাশায় দিনাতিপাত করছেন তারা। বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ছোট-বড় সবকটি বাজারে। এর মধ্যে ‘মরার উপড় খাড়ার ঘা’র মতোই নতুন হৃৎকম্পে রয়েছেন ক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির ডাকা দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের অযুহাতেই আবার নতুন করে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এমন মূল্যবৃদ্ধি বলছেন সাধারণ ক্রেতারা। এদিকে শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু করলেও দাম ছাড়ছেন না ব্যাবসায়ীরা। বাজারে পন্য সরবরাহের ঘাটতি নেই তবুও অযুহাত দেখাচ্ছেন পরিবহন ধর্মঘটের। ভোগ্যপন্যের উর্ধ্বমুখী দামে নাকাল সাধারণ মানুষ। চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, সবজি সবকিছুর দামই যেনো আকাশচুম্বি। এমতাবস্থায় নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

শনিবার গোলাপগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমার লক্ষণ নেই। গেলো ঈদ উল আযহায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক তেলের দাম লিটার প্রতি চার টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও গোলাপগঞ্জের বাজারে তেলের দাম তখনও কমেনি। বরং গেলো অক্টোবর মাসে আরো ৭টা বেড়েছে প্রতি লিটারে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহ দুয়েক আগেও যে টমেটো কেনা যেত সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা কেজি দরে, এখন তা ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অথচ টমেটো শীতকালীন সবজি হওয়ায় এ সময়ে দাম কম থাকে। এভাবে বেড়েছে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য শীতের সবজির দামও। মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ আমিষজাতীয় খাদ্যের দামও আগের মতো বাড়তি রয়েছে। পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে কেজি ৬০ থেকে নেমেছে ৪৫/৪০ টাকায়। তবে ভালো মানের পেঁয়াজের পরিমাণ কমে গেছে বাজারে। তাছাড়া চিনি, ডাল, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি রয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল কেনা শুরু হবে। অর্থাৎ আমন ধান উঠেছে কৃষকের ঘরে। বাজারে নতুন চালও আসছে কিছু কিছু, কিন্তু চালের দামও নামেনি। বরং মাসখানেক আগের তুলনায় চালের দাম সোয়া ২ শতাংশ পর্যন্ত বেশি রয়েছে। গত বছরের তুলনায় বেশি রয়েছে ১০ শতাংশ। তেল, চিনি, ডালের দাম এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম বেড়ে প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় উঠেছে এমনকি বাজারের সবচেয়ে কমদামী তেলের লিটারও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০থেকে ১৪৫ টাকায়। তেলের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়তি রয়েছে ৪৭ শতাংশ। বেশিরভাগ দোকানেই প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে ঠিকই কিন্তু কিছু পন্য নিয়মিত সিলেট থেকে ক্রয় করে আনতে হয়। শুক্রবার ও শনিবার এই দুই দিন সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জে পন্য আনতে ট্রাক ও পিকআপের পরিবর্তে সিএনজি দিয়ে আনতে হয়েছে। তাই গাড়ি ভাড়াও খানিকটা বেড়েছে-এবং সেই কারণেই সকল পন্যেই কম-বেশী দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর প্রভাব বেশি পড়েছে সবজী বাজারে। অন্যদিকে ভূষিমালের দোকানে বিভিন্ন কোম্পানীর গাড়ি না আসায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের সরবরাহই নেই-যা আছে তা একটু বেশি দরেই বিক্রি করছেন তারা।

গোলাপগঞ্জের প্রধান বাজারে ক্রয় করতে আসা সফিক আহমদ জানান,‘আমি একজন বেসরকারী চাকরীজীবি। সীমিত বেতনের আওতায় পরিবার সামাল দেওয়ার দুরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম আমাদেও মতো সীমিত আয়ের লোকজনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে উপোস থাকতে হবে।”
বাজারে আসা নির্মানশ্রমিক লোকমান মিয়া বলেন- “এক রোজ কাজ করলে পাই ৪শ-৫শ টাকা। সারাদেশে উন্নয়নের কথা টিভিতে শুনতে পাই-কিন্তু এদিকে আমরা ডালভাতেও যে পেট পুরতে পারিনা তার খবর কি কেউ রাখে?-এভাবে আর কতদিন চলবে জানিনা”। পরে প্রশাসন ও বাজার সংশ্লীষ্টদেও নিয়মিত মনিটরিংয়ের দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবির জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগেও মনিটরিং করা হয়েছে। তবুও আমরা দ্রুত মনিটরিং করবো এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে এর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য, জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বন্ধ ছিলো পণ্যবাহী পরিবহন। কোনও আলোচনা ছাড়াই ডিজেলের লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেন পরিবহন সংশ্লীষ্টরা। এই বাড়তি মূল্য কমানোর আগ পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলেও হুশিয়ারী দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় এবং লোকসানের হাত থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে রক্ষা করতে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে জ্বালানি তেলে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এমনই ব্যাখা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন