চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার ইকো-ট্যুরিজম সম্পদে ভরপুর। দেশের সবচেয়ে বৃহত হাওর মৌলভীবাজারের হাকালুকির এখন ভরা যৌবন। হাকালুকির থৈই থৈই জলে সোনালী ঝিলিক আর বড় বড় ঢেউ। মৎস্য চাষীদের জালে আটকা রুপালী মাছ, মাঝি মাল্লার গলায় ভাটিয়ালী গানের সুর, ভাসমান বাঁশের ভেলা, দিগন্তজুড়ে রঙ্গীন আকাশ আর শিতল বাতাস। করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে হাকালুকি হাওরের এই বিচিত্র রুপ উপভোগ করতে এখানে বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। তবে দর্শনার্থীরা বলছেন পর্যটক সুবিধায় প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা। আর জেলা প্রশাসন জানালেন পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে।
সিলেটি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে “হাওরের মধ্যে হাকালুকি আর যত কুয়া, বেটা হইল মামন মনসুর আর যত পুয়া। অর্থাৎ এই হাওরের কাছে অনান্য হাওর কুয়ার (অনেক ছোট) সমান। যার ভেতরে রয়েছে ছোট বড় ২৪৫ টি বিল। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৬ উপজেলায় ১৮৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এর বিস্তৃতি। নানা জীব বৈচিত্রে ভরপুর এ হাওর শুধু কৃষির সম্ভারই নয় এটি এখন পর্যটকদের প্রাণ খোলে নিস্বাস নেয়ারও একটি স্থান। এ হাওর রয়েছে শতশত প্রজাতির মিঠা পানির মাছ ও রয়েছে জলজ উদ্ভিদ। আবার মাঝে মধ্যেই ভেসে আসে মাঝির কন্ঠের সু মধুর গানের সুর। ক্রয় করা যায় হাওরের তাজা মাছ।
তাই মৌলভীবাজার হাকালুকি হাওড় এর মনোরম সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। অথই জলের ঢেউ , শুভ্র-নীল আকাশের সাথে হাওরের মিলেমিশে এক হওয়ার দৃশ্য আর হিজল-করচের জলের বন দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। আর মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরন নিয়ে জেলেদের হাওড়জুড়ে নৌকাযোগে ছুটোছুটির দৃশ্য অন্য রকম আনন্দ দেয় বেড়াতে আসা সকল বয়সের পর্যটকদের। মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমূল, জুড়ী উপজেলার কন্টিনালা খেয়াখাট ও বড়লেখা উপজেলার খাল্লা এলাকায় পর্যটকদের জন্য হাওড় ভ্রমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। আর পর্যটকদের নৌকায় হাওড় ভ্রমন করিয়ে জীবন-জীবিকা চলে এসব নৌকার মাঝিদের।
জুড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাশ বলেন, পর্যটকদের সুবিধায় কয়েকটি টাওয়ার ছাড়া তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। সরকার এটিকে সংরক্ষন করে পর্যটক বান্ধব করে গড়ে তুললে এখান থেকেই আসবে বিপুল পরিমান রাজস্ব। তাই হাকালুকি হাওরে পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির দাবী করেন তিনি।
এর নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান জনশ্রুত। কেউ কেউ বলেন, প্রায় দুই হাজার বছর আগে আকা নামে এক রাজার রাজ্য ভূমিকম্পে মাটির নিচে চলে গিয়ে সে স্থান পানিতে ভরে যায়। এর পর থেকে আকালুকি বা হাকালুকি হয়েছে। আর কেউ বলেন হাঙ্কা নামে এক কুকি অধিবাসী রাজার ভয়ে এখানে লুকিয়ে ছিলো এর পর থেকে এটিকে হাঙ্কা লুকি বা হাকালুকি বলে ডাকা হয় বলে জানালেন জুড়ি গোয়াল বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন লেমন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, মৌলভীবাজারে হাকালুকি হাওড়সহ জেলার সকল প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গুলোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্ েকাজ করছে জেলা প্রশাসন।
মৌলভীবাজার পর্যটনকে ঘিরে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে শুধু ইকো ট্যুরিজমকে ভিত্তি করে জেলার অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।