• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কী ঘটলো চাঁদপুর থেকে সিলেটে আসা সেই রেহেনার ‘ভাগ্যে’?

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২১
কী ঘটলো চাঁদপুর থেকে সিলেটে আসা সেই রেহেনার ‘ভাগ্যে’?

যুগভেরী রিপোর্ট :
চাঁদপুর থেকে সিলেটে এসে এক যুবকের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে স্ত্রী দাবি করা সেই রেহেনা আক্তার (৩৬) বর্তমানে সিলেটেই অবস্থান করছেন। তিনি সহায়তা চাচ্ছেন পুলিশের।
রেহেনার দাবি- পুলিশ তার কাছ থেকে দুই দিনের সময় নিয়েছে। এর মধ্যে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবে। এই আশ্বাসেই শনিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি ওই যুবকের বাড়ির সামনে থেকে সরে আসেন।
তবে পুলিশ বলছে- কোনো সময় দেওয়া বা নেওয়া হয়নি। শনিবার সন্ধ্যায় রেহেনাকে বলা হয়- সে যেন বিয়ের উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে আসে। কিন্তু এরপর থেকে সে আর পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি।
স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে সিলেটের জালালাবাদ থানার কালীবাড়িতে এক যুবকের বাড়ির সামনে শুক্র ও শনিবার অবস্থান নেন মোছা. রেহেনা আক্তার। তিনি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার শিদনা গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের মেয়ে। জালালাবাদ থানাধীন সিলেট মহানগরীর কালীবাড়িস্থ বন্ধন ১৪-ডি এর বাসিন্দা মো. আবু হানিফের ছেলে মিছবাহুজ্জামান রুহিনকে তিনি স্বামী দাবি করছেন। রুহিন পেশায় একজন থাই মিস্ত্রি।
রেহেনা জানিয়েছেন, রুহিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফেসবুকের সূত্র ধরে এ সম্পর্ক তৈরি হয়। গত ৮ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে দু’জন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সিলেট থেকে সকল কাগজপত্র ঠিক করে নারায়ণগঞ্জে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে রুহিন তাকে নারায়ণগঞ্জে একটি বাসায় রেখে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করেন। রুহিন সিলেট থেকে কিছুদিন পর পর গিয়ে সেখানে রাত কাটাতেন। এভাবে ৭ মাস এক সঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে রুহিন বদলে যান। হঠাৎ করে তিনি রেহেনার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
রেহেনা জানান, বিয়ের কোনো কাবিননামা তার কাছে নেই। আর আদালতের মাধ্যমে বিয়ের যে এফিডেভিট করা হয়েছে সেটিও রুহিনের কাছে রয়েছে। সাক্ষী যারা ছিল তারাও রুহিনের মতো আড়ালে চলে গেছে। রুহিনের সঙ্গে তার প্রেম চলাকালীন সময় থেকে তার পরিবারের সবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। বিয়ের পরেও তিনি নিয়মিত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। বর্তমানে রুহিনের কথায় তার পরিবারও রেহেনাকে মেনে নিচ্ছে না। রেহেনার কাছে কাবিননামা না থাকলেও ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড ও মেসেজ আদান-প্রদানের প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ পরিস্থিতিতে গত শুক্র ও শনিবার রুহিনের কালিবাড়ীস্থ বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি ও ‘স্বামীর’ বাড়িতে অবস্থান পাওয়ার দাবি জানান রেহেনা। রুহিন যদি তাকে মেনে নিয়ে বাড়িতে না তুলেন তবে বিষ খাবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের জালালাবাদ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় এ জায়গায় উৎসুক জনতার ভিড় জমে ওঠে। পরে রেহেনাকে বুঝিয়ে রুহিনের বাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে রবিবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা হয় রেহেনার সঙ্গে। তিনি জানান, তার কাছ থেকে জালালাবাদ থানাপুলিশ ২ দিন সময় নিয়েছে। এই দুইদিনের মধ্যে একটি সমাধান করে দেবে পুলিশ।
তবে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান রবিবার বিকেলে বলেন, সময় দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ওই মহিলার অবস্থানের খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে সেখান থেকে তুলে দেয়। এসময় তাকে উপযুক্ত কাগজপত্র বা প্রমাণাদি নিয়ে আমাদের কাছে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
ওসি নাজমুল হুদা খান আরও বলেন, তবে এর আগেও ওই মহিলা আমাদের কাছে এসেছিলেন। সেসময় রুহিনের পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করেছেন মর্মে একটি জিডি করেন জালালাবাদ থানায়। সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এদিকে, রুহিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে রেহেনা আক্তার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩৩৫/২০২১। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে।

এ ব্যাপারে গত দুদিন থেকে রুহিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার দুটি নাম্বারই বন্ধ পাওয়া যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন