যুগভেরী ডেস্ক
খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে ‘রক্তক্ষরণ হচ্ছে’ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাকে বিদেশে নেওয়া এখন ‘অতি জরুরি’।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশ নিতে সরকারের সায় না পাওয়ার মধ্যে শনিবার দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে একথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুখ, সেই অসুখটা হচ্ছে প্রধানত তার পরিপাকতন্ত্রে। তার (খালেদা জিয়া) অনেক অসুখ। এখন যেটা তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে, সেটা হচ্ছে তার পরিপাকতন্ত্র থেকে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই রক্তক্ষরণকে বন্ধ করা।
“এখন ঠিক কোন জায়গায় তার রক্তপাত হচ্ছে, এটাকে বের করার জন্যে আমাদের ডাক্তাররা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার তারা, গত কয়েকদিন ধরে তারা বিভিন্ন রকম কাজ করছেন। চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে তারা করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা এগোতে পারছেন না। কারণ সেই ধরনের কোনো টেকনোলজি বাংলাদেশে নাই। যে কারণে ডাক্তাররা বার বার বলছেন যে, তাকে (খালেদা জিয়া) একটা এডভান্সড সেন্টারে নেওয়া দরকার।”
খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে চায় বিএনপি। কিন্তু সরকারের সায় এখনও পায়নি। আইনমন্ত্রী বিএনপিকে বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসতে।
সরকারের মন্ত্রীদের নানা বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “তাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো নেই, মানবিক বোধও নেই। তাদের এত বেশি দাম্ভিকতা যে তারা যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করতে এতটুকু দ্বিধা করেন না।
“তারা একবারও মনে করেন না যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন সেই মহিয়সী নারী, যিনি ১৯৭১ সালে তার স্বামী যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন তার শিশুপুত্রকে হাতে ধরে পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন এবং সেখানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে ছিলেন।”
পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে খালেদা জিয়ার ত্যাগ স্বীকার তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সব কিছু ভুলে যায় তারা। ওয়ান-ইলেভেনে যখন শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলেন, তখন এই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার মুক্তির জন্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আজকে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কেন দিচ্ছেন সবাই আমরা বুঝি, কেন দিচ্ছেন সবাই জানে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আলোচনা সভায় বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
’৯০ এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. শামসুল আলম মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পক্ষে। অনেক মন্ত্রীর সাথে আলাপ করেন, দেখবেন তারা বলবেন, তাকে যেতে দেওয়া হোক। বিপক্ষে শুধু এক জন।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে, ঢাকা থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা রাজপথে শহীদ হব।”
আমানের সভাপতিত্বে ও ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুদ্দিন মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা অধ্যাপক হারুন আল রশিদ বক্তব্য রাখেন।