যুগভেরী রিপোর্ট
সিলেট থেকে আকাশপথে পণ্য রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা কেটে যাচ্ছে। খুলছে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মিত হচ্ছে বিশাল ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’। আসছে জানুয়ারিতে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই কার্গো কমপ্লেক্স চালু হলে সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুটিরশিল্প পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত গার্মেন্ট পণ্য ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি সম্ভব হবে। ওসমানী বিমানবন্দর ঘিরে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড শেষ হলে আকাশপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি হাবে পরিণত হতে পারে বলে আশাপ্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ওসমানী বিমানবন্দর নিয়ে একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেন। এই প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের শক্তি বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ, নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, বোডিং ব্রিজের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সুপরিসর এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ নির্মাণের প্রথম অংশের কাজ শুরু হয় গেল বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। আর দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে।
বর্তমানে কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী জানুয়ারিতে কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ। তিনি জানান, এই কার্গো কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ১০০ টন। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ ডেডিকেশন সিস্টেম স্ক্যানার মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে।
হাফিজ আহমদ আরও জানান, কার্গো কমপ্লেক্স ও আনুষঙ্গিক সব কাজ সম্পন্নের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবে। তাদের অনুমতি পেলেই পণ্যরপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটের শাকসবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, পান, ফ্রোজেন ফিশ, নানাজাতের সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুঠির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বিশাল অংশ সিলেটের অধিবাসী হওয়ায় সেখানকার বাজারে সিলেটের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকায় কার্গো টার্মিনাল ও কমপ্লেক্স চালুর পরই সরাসরি রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। পরবর্তীতে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে এই রপ্তানির সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে। এদিকে, শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য বর্তমানে ঢাকার শ্যামপুরে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনুমোদিত ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিতে হয়। শ্যামপুরের এই সুবিধা যাতে সিলেটে পাওয়া যায় সে জন্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। সিলেটে কার্গো টার্মিনাল ও এক্সপোর্ট কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ায় রপ্তানি সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।